কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জয়পুরহাট, জেলার চকদাদরা (ফকিরপাড়া) গ্রামের মোসলেম উদ্দিন লাউসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করে এখন লাখপতি। তার এই সাফল্য দেখে এলাকার অনেকে সবজি চাষ শুরু করেন এবং তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। যে এলাকাগুলোতে ধান চাষ ছাড়া অন্য কোন ফসল তেমন একটা হতো না, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে সেখানে এখন বিভিন্ন সবজির চাষ হচ্ছে। এতে অনেক গরিব কৃষক আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়ার সুবাদে টেলিভিশনে উন্নয়নমূলক সংবাদ, বিশেষ করে কৃষি সংবাদ দেখে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেক কৃষক। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষকরা মোবাইল ফোনে কথা বলে দাম নিশ্চিত করার পর জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে। ডিজিটাল ব্যবস্থার সুবাদে ফসল নিয়ে বাজারে গিয়ে কৃষকদের আর ধর্না দিতে হয় না।
কৃষি ক্ষেত্রে এর ভালো দৃষ্টান্ত মিলে জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চকদাদরা এলাকার ফকিরপাড়া ও বিনশিরা দুটি গ্রামে। বর্তমানে সেখান ব্যাপক ভাবে সবজি চাষ হচ্ছে। আর সেই ফকিরপাড়ার লাউ চাষী হলেন মোসলেম উদ্দিন (৪৫)। তিনি জানান, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাষাবাদ এবং সবজির পাইকারী ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জমি থেকেই লাউ বিক্রি করে থাকেন তিনি। মাত্র ১০/১২ হাজার টাকা খরচ করে এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করে প্রথমে ভাল ফলন পান। এরপর থেকেই তার শুরু হয় লাউ চাষ। এরপর বেগুন, করলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করতে শুরু করেন। বর্তমানে মোসলেম উদ্দিন প্রায় তিন বিঘা জমিতে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। লাউয়ের জমি থেকে প্রতিদিন ৪০/৫০টি করে লাউ তুলে বাজারে পাঠাচ্ছেন। লাউ চাষে খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশী থাকে বলে তিনি জানান ।
মে মাস থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত এ ৬ মাসে লাউ চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়েছে তার। কয়েক বছর ধরে লাউ চাষে সাবলম্বী হওয়ায় মোসলেম উদ্দিন সংসারের খরচ চালানোর পর দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে ইশতিয়াক আহমেদ মারুফ পুলিশ লাইন্স স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
মোসলেম উদ্দিন জানান, বর্তমানে তার ২৫ শতাংশ লাউয়ের জমি থেকে প্রতি দিন কমপক্ষে ৪০/৫০টি লাউ বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকারী হিসেবে প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। আরও দেড় মাস লাউ বিক্রি চলবে বলে জানান তিনি। ধান চাষ করলে হাতে টাকা আসে না, আর সবজি চাষ করলে পয়সার অভাব হয় না। সে কারণে ধানের চেয়ে সবজি চাষে বেশী আগ্রহী এ এলাকার কৃষকরা। মোসলেম উদ্দিনকে অনুসরণ করে এলাকায় যারা লাউ চাষ করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন আলেফ উদ্দিন, মোজাফ্ফর হোসেন, রেজাউল, রিয়াজুল, মালেক সরকার ও আলী মোহাম্মদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তাহেরুল ইসলাম জানান, জেলায় এবার ২শ’ হেক্টর জমিতে লাউ চাষসহ প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়েছে। লাউ চাষে বেশি লাভ হওয়াতে কৃষকরা এখন লাউ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম