কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আইয়ুব-নিপা দম্পতির নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওষুধি গাছ রোপণ । খোঁজ পেলেই হয় নিজে না হয় অন্য কারও মাধ্যমে ওষুধি গাছ সংগ্রহ করে নিজ বাগানে রোপণ করেন। পরে ওই গাছটির ওষুধি গুণাগুণ বের করতে ভেষজ গাছের গুণাগুণ নিয়ে লেখা বই পড়তে শুরু করেন। ইতোমধ্যে তাদের ওষুধি গাছের বাগানে ২ হাজার প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করে রোপণ করেছেন। এলাকায় এই দম্পতি কবিরাজ দম্পতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আয়ূব আলী হালদারের এখন নিজের নামের হালদার পদবিটাও কবিরাজের আড়ালে হারিয়ে গেছে।
তিনি এখন নাম জিজ্ঞাসা করলেই কবিরাজ আয়ূব আলী পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন। এই দম্পতি তাদের কাজের স্বীকৃত স্বরপ অনেক পুরুস্কারও অর্জন করেছেন। খুলনা ললিয়ান সড়কের কাতিয়ানায়লা বাজারের সামান্য দক্ষিণে আয়ূব আলীর বাড়িটির রাস্তায় পা দিতেই দুই পাশ থেকে স্বাগত জানালো তুলসী গাছের সারি। আর একটু এগুলেই বাসক গাছ। পলাশ, অশোক, চিরতা গাছ এবং শ্বেত ও নীল অপরাজিতা এবং নীলকণ্ঠ ফুলের আহ্বান। একেবারেই ঔষুধি গাছে ভরপুর এক বাগান। অদ্ভূত এক সুগন্ধে বিমোহিত হতে হয়।
বোঝাই যায়, নানান গাছ ও ফুলের গন্ধে এক ভিন্ন রকমের আবহ তৈরি করেছে। নিপা-আইযুব দম্পতি সযত্নে তাদের ছোট্ট ঘরটিকে কেন্দ্র করে দুই হাজারেরও বেশী প্রজাতির হাজার দশেকেরও বেশী গাছে ভরিয়ে তুলেছেন বাগানটিতে।
আইযুব আলী তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাগরে মাছের ব্যবসা দিয়ে। ছিল বড় ট্রলার (ইঞ্জিন চালিত নৌকা)। ট্রলারে সঙ্গী-সাথী নিয়ে সাগরে যেতেন জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনতে। সেই মাছ খুলনা শহরে এনে বিক্রি করতেন। দিনে দিনে পুঁজি বাড়ে। ব্যবসাও বাড়ে। একদিন দস্যুরা তাঁর ট্রলারে হামলে পড়ে। ছিনিয়ে নেয় সব। নগদ টাকা, মাছ কিছুই রাখে না। একেবারে প্রায় সব হারিয়ে আইয়ুব উদ্ভ্রান্তের মত হয়ে পড়েন। খুলনা শহরের রূপসা ফেরিঘাটের কাছে দোকান দেন। রূপসায় মাছের আড়ত হওয়ার সময় স্থান সম্প্রসারণ করলে ভাঙা পড়ে তাঁর দোকান।
কি করবেন, কিভাবে চলবেন, সংসারের খরচ কিভাবে আসবে; এই দুশ্চিন্তায় যখন আইয়ুব আলী পাগলপ্রায়; তখুনি এক এনজিও কর্মকর্তার পরামর্শে আইযুব আলী নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। এই কাজে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী নাজনীন আক্তার নিপা। আইযুব আলী এখানে-সেখানে ঘুরে ঘুরে গাছের চারা ও গাছের কলম জোগাড় করেন; আর পরম মমতায় নিপা তার যত্ন করেন। নতুন পাতা ছেড়ে সেই গাছ বাড়তে থাকে। সেই টবের গাছ আইয়ুব আলী বিক্রি করেন।
নিপা-আইয়ুব দম্পতি লক্ষ্য করে বাজারে ওষুধি গাছের চাহিদা বেশী, দামও বেশী। একারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওষুধি গাছের বাগান গড়ে তোলেন। তাদের ছোট্ট বাড়িটির চারপাশ ঘিরে এক একর জায়গায় এখন পা ফেলা দায়। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে এই ষোল বছরে নিপা-আইযুব দম্পতির ঔষধি গাছের বাগান করাই নেশা ও পেশা। এটাই তাঁদের জীবিকা। নানান জায়গা থেকে ওষুুধি গুণ সম্পন্ন গাছ জোগাড় করা, ওই গাছ থেকে আরও গাছ তৈরি করা, টবে ও কলমের চারা তৈরি করা; তাই বিক্রি করাই কাজ।
কত গাছ আছে আইযুব আলীর বাগানে? উত্তরে জানান, দুই হাজার প্রজাতির দশ হাজারেরও বেশী গাছ আছে। প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা নাগেশ্বর, কর্পুর, তেজবল, অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, নাগদানা, জলজামিনী, গন্ধনাকুড়ি, হলুদ বাসক, শ্বেত জয়ন্তী, অশোক, শ্বেত পলাশ, চিরতা, পুনর্নভা, জাতিপুষ্প, গোরখ চাকুলিয়া, কূটরাজ, রুদ্রজটা, ঈশ্বরমূল, তমাল, চার প্রকারের বিশাল্যাকরণী, রক্ত চন্দন, শ্বেত চন্দন প্রভৃতি গাছ আছে, তাঁদের বাগানে।
নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া আইযুব আলী এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা নিপা সযতনে কবিরাজিও করেন। টিকিয়ে রাখতে চান ওষুধি গাছের এই আয়োজন। গাছ জোগাড় করা, লালন-পালন করা, বিক্রি করা প্রভৃতির মধ্যে কাটাতে চান বাকীটা জীবন। উত্তরসূরীদেরও এই কাজে আগ্রহী করে তুলতে চান। এই কারণে তাঁর একটি মেয়েকে তিনি ইউনানি পড়াচ্ছেন।ইচ্ছা মেয়েটি যেন এই পেশায় সমৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
কৃপ্র/এম ইসলাম