কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে। শিক্ষার কোন বয়স নেই । শিক্ষা ছাড়া মানুষের জীবনে উন্নতি সম্ভব নয়– এই কথাগুলো ৬৫ বছর বয়সে হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছেন বাছিরন নেছা নামের এক বৃদ্ধা। চলতি বছর তিনি পঞ্চম শ্রেণির পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। বাছিরন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হোগলবাড়ীয়া পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী বাছিরন নেছা। তিনি হোগলবাড়ীয়া মাঠপাড়ার মৃত রহিলউদ্দীনের স্ত্রী। পাঁচ বছর আগে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তারপর থেকেই নিয়মিত স্কুলে যাওয়া–আসা। স্কুলে উপস্থিতি তার শতভাগ। ছোট ছোট বন্ধু–বান্ধবদের পিছনে ফেলে প্রতি ক্লাসেই ক্রমিক নম্বর ২ থেকে ৪ এর মধ্যে থাকে।
এত বছর বয়সে স্কুলে ভর্তির বিষয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বাছিরন জানান, আমার তিন সন্তান। এক ছেলে ও দুই মেয়ে।ছোট ছোট ছেলে–মেয়ে রেখে আমার স্বামী প্রায় ৩৫ বছর আগে মারা গেছেন। আমার স্বপ্ন ছিল ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবো। অন্তত হাই স্কুল পর্যন্ত পড়াব।কিন্তু আমার পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে তাদের লেখাপড়া শেখাতে পারিনি।
বাছিরনের বড় মেয়ে জাহানারা খাতুনের তিন ছেলে–মেয়ে, একমাত্র ছেলে মহিরউদ্দীনের দুই ছেলে। বড় নাতি জাহিদ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র অন্যজন নাহিদ গ্রামের স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছোট মেয়ে বানেরা খাতুনের এক ছেলে জসীম। তিনি জানান, আমার ছেলে ও বউমা আমাকে স্কুলে যেতে সহায়তা করে। আমার প্রতিবেশী বিভিন্ন বয়সী মানুষ ও গ্রামবাসীরা আমাকে উত্সাহিত করেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আনারকলি জানান, স্কুলের ছোট ছোট সহপাঠীদের সাথে নিয়মিত ক্লাস করেন তিনি। লেখাপড়াতে তার খুব আগ্রহ। সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করতে, মিশতে বা মানিয়ে নিতে কোনই সমস্যা হয়নি তার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলালউদ্দীন আহমেদ জানান, নাছিরন নেছা এবছর পিএসসি পরীক্ষার্থী। আমি ত্র আগ্রহ দেখে স্কুলে ভর্তি করেছি। তিনি এলাকার নিরক্ষর মানুষের জন্য একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আকবর আলী জানান, আমি প্রধান শিক্ষকের নিকট বৃদ্ধা নাছিরনের কথা শুনেছি। তার আগ্রহের খবরে আমি খুব খুশি। এরকম নিরক্ষর মানুষ শিক্ষায় এগিয়ে আসলে সরকারের সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচি সফল হবে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ এম ইসলাম