মোহাম্মদ এরশাদুল হক: বাংলাদেমের হলুদ গুনগত দিক থেকে বিখ্যাত। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের হলুদের কদর থাকায় হলুদের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মসলা হলুদ বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। মসলা ছাড়াও আচার অনুষ্ঠানে ও ঔষধি হিসেবেও হলুদের ব্যবহার খুবই ব্যপক। বাংলাদেশের প্রায় দশ ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ী এলাকায় জুম চাষে হলুদ একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে। এছাড়াও ছায়াযুক্ত সমতল স্থানেও হলুদ আবাদের ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে মোট প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয় এবং এর মোট উৎপাদন প্রায় ৭২ হাজার টন। হলুদ উৎপাদনে বারি উদ্ভাবিত হলুদ জাতের চাষ এলাকা বাড়িয়ে এর উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির তাল মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে কৃষি যান্ত্রিকীরণ অপরিহার্য। গবেষণা করে দেখা গেছে যে, জমিতে শক্তির ব্যবহার বাড়লে উৎপাদন বাড়ে। তাই জমিতে শক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে এবং বাংলাদেশের কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে বিভিন্ন ফসলের জন্য লাগসই কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
হলুদ সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপগুলো হলো পরিষ্কার করা, বাছাই করা, সিদ্ধ করা, শুকানো, পলিস করা এবং গুড়া করা। প্রতি ৪০ কেজি কাচাঁ হলুদ সিদ্ধ করে শুকিয়ে ৮-১০ কেজি শুকনা হলুদ পাওয়া যায়। এরপর মানসম্পন্ন হলুদ ও তার কাঙ্খিত রং পেতে গুড়া করার আগে হলুদকে পলিস করতে হয়। হলুদ পলিস করা বলতে বুঝায় শুকানো হলুদের চামড়া, শিকড় এবং অন্যান্য অপদার্থকে সরিয়ে উজ্জ্বল , মসৃন এবং হলুদাভ কন্দ পাওয়া। এই পলিসের কাজটি ঠিকমত করা না হলে অপদার্থ হলুদের গড়িার সাথে মিশে শুধু এর গুন ও রং নষ্ট করে তাইনা উপরন্ত স্বাস্থের হানি ঘটায়। কৃষকরা সাধারনত বস্তায় ভরে হাত দিয়ে পিটিয়ে পলিসের কাজ করা হয়ে থাকে। এ কাজটি সময় সাপেক্ষে, কষ্টসাধ্য এবং শ্রমনির্ভর। পাহাড়ী এলাকায় বাশের তৈরী ঢেকির সামনে বস্তায় ভর্তি হলুদ বেধে পলিস করে থাকে। কিন্তু এতে বারবার বস্তা ছিড়ে যায়। কৃষকের কষ্ট লাঘব করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোষ্টহারভেস্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ একটি শক্তিচালিত হলুদ পলিসার উদ্ভাবন করেছে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য
# স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত লেীহ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা যায়
# মাত্র ০.৫ অশ্বশক্তির বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা চালানো সম্ভব
# একজন মানুষ অতিসহজেই এ যন্ত্র চালাতে পারে
# রৌদ্র তাপে শুকিয়ে গরম অবস্থায় পলিস করলে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও গুনাগুন ভাল হয়।
যন্ত্রের বিবরণ
# যন্ত্রটি এমএস এ্যাঙ্গেলবারম, এমএস রড, এমএস শীট, এমএস ফ্লাটবার, ডি-পুলি, রিডিউসার গিয়ার বক্স, বিয়ারিং ইত্যাদি দিয়ে তৈরি।
# ষড়ভুজাকৃতির ড্রামের ভিতরের দিকে খাঁজ কাটা প্লেট বসানো থাকে।
# ঘূর্নায়মান ষড়ভুজাকৃতির ড্রামের দৈর্ঘ্য ৬১০ মিমি বাহিরের ব্যাস ৬৯০ মিমি এবং ভিতরের ব্যাস ৫৯০ মিমি।
# যন্ত্রের মাপ: ১০৪০ x ৮৫০ x ১৪৫০ মিমি
# প্রতি ব্যাচে হলুদের ওজন: ৩০ কেজি
# যন্ত্রের ওজন: ৯০ কেজি
কার্যপ্রনালী
যন্ত্রটি একটি ছায়ামুক্ত সমতল ও খোলা জায়গায় বসান। হলুদ পলিসের আগে পরিমান মতন সিদ্ধ করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। যন্ত্র ব্যবহারের দিন সকালের রোদে পুণরায় শুকিয়ে হালকা গরম করে নিলে মাড়াই ক্ষমতা ও গুনগতমান বৃদ্ধি পায়। প্রথমে ষড়ভুজাকৃতির ড্রামে ৩০ কেজি হলুদ ঝুড়ি দ্বারা ঢেলে দরজা ভাল করে বন্ধ করে দিতে হবে। তারের সাহায্য বৈদ্যুতিক লাইনে মোটরকে সংযোগ দিন। সুইচ অন করলে মোটরটি চালু হবে এবং ড্রামটি ঘুরতে থাকবে। ড্রামের ঘূর্ননের সময় ভিতরকার খাঁজকাটা অংশের দ্বারা হলুদের বহিরাংশের চামড়া ও ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। ড্রামের ফাঁকা অংশ দিয়ে ময়লা নিচে পড়তে থাকে। আনুমানিক ২০ মিনিটে এক ব্যাচের হলুদ পলিস হয়ে যায়। পলিসকৃত হলুদকে ড্রামের দরজা খুলে বের করে এনে পুনরায় নতুন ব্যাচে ৩০কেজি হলুদ ড্রামে প্রবেশ করাতে হয়। যন্ত্রটি প্রতিবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালভাবে পরিষ্কার করে ঘূর্নায়মান অংশে প্রয়োজনীয় পিচ্ছিলকারক দিয়ে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।
পরীক্ষার ফলাফল
কার্যক্ষমতা: ৬৫-৯০ কেজি/ঘন্টা
প্রয়োজনীয় শ্রমিক : ১ জন
মূল্য: ৩০,০০০ টাকা (মোটরসহ)
মোহাম্মদ এরশাদুল হক, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোষ্টহারভেস্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ,বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
কৃপ্র/ এম ইসলাম