কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে হ্যারিকেন রূপী গোর্কি বয়ে গিয়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে উপকূলের জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ভোলা, বরিশালের জনজীবন লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। এতে তিন লক্ষাধিক মানুষ ও অগণিত গবাদিপশু মারা গিয়েছিল। হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছিল। আজ শনিবার সেই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের ৪৬তম বার্ষিকী।
সেই রাতের বিভীষিকাময় স্মৃতি এ অঞ্চলের স্বজনহারা পরিবারগুলোকে আজও ব্যথিত করে। সে দিনের গোর্কির তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের পানি বাড়তে বাড়তে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়। এ ঘূর্ণিঝড়টি মাঝরাতে আকস্মিক থেমে যায়। ২ ঘণ্টা পরে ফের প্রবল বেগে ঝড় শুরু হয়। ওই সময় বাস্তুহারা মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বের হয়ে বাড়ি-ঘরে ফিরছিল। পুনরায় ঝড় শুরু হওয়াতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অগণিত মানুষকে। এ কারণে প্রাণহানি হয় বেশি।
১৯৭০ সালের এই দিনে লক্ষ্মীপুর ও তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালী, ভোলা, বরিশালসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে আঘাত হানে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এতে করে দেশের উপকূলীয় জনপদ পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। গোটা জনপদ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। তৎকালীন পাক সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণে সেদিনের মানুষগুলো অকাতরে জীবন দিতে হয়। সেই দিনের ক্ষতি আজও উপকূলীয় মানুষ কাটিয়ে ওঠতে পারেনি।
স্মরণকালের ভয়াবহতম এই দুর্যোগে উপকূলীয় তৎকালীন নোয়াখালীর অন্তর্গত লক্ষ্মীপুরের (তৎকালীন) উত্তর হাতিয়া বর্তমান রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় সৃষ্টি হয়, চরম দুর্যোগময় পরিস্থিতি। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সব কিছু। উত্তাল ঢেউয়ের প্রবল স্রোতের টানে ভাসিয়ে নিয়ে যায় হাজার হাজার মানুষ, গবাদি-পশু, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ লক্ষ কোটি টাকার সহায় সম্পদ। সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায় বিস্তীর্ণ জনপদ, ক্ষেতের ফসল।
একদিকে চারদিকে লাশ-আর-লাশ, লাশের অপরদিকে পশু পচা গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। ৮-১০ ফুটের জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। সেই দিনের ভয়াবহ দুর্যোগের কথা মনে পড়লে আজও সাধারণ মানুষের মন ও পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ / কৃপ্র/ এম ইসলাম