কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ এবার নিয়মিত বৃষ্টিপাত হওয়ায় হবিগঞ্জে চায়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা চা উৎপাদনের অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট, মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ১৫,৭০৩.২৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪টি চা বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে এবার ২২/২৫’শ কেজি চা-পাতা উৎপাদন হবে। যা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি।
এছাড়া লস্করপুর, সিলেট, জুড়ী, লংলা, মনু-ধলাই, বালিশিরা ও চট্রগ্রামসহ ৭টি ভ্যালীতে প্রায় ৩৫৮টি বাগান রয়েছে। এরমধ্যে ১৫৮ টি বাগানে ফ্যাক্টরী রয়েছে। আর শ্রমিক রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এরমধ্যে হবিগঞ্জের বাগানগুলোতে চা পাতা উৎপাদনে লক্ষাধিক শ্রমিক জড়িত রয়েছে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ নারী শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের লস্করপুর ভ্যালীতে চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চা শিল্পের ১৬১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। ভ্যালীতে চলতি মৌসুমের অক্টোবর পর্যন্ত (প্রথম ৮ মাসে) সর্বোচ্চ উৎপাদন অর্থাৎ ১ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮২১ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩৬.৭৫ শতাংশ বেশী। ।
চলতি মাসে শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায়, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে বাগানের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা আরো জানিয়েছেন, রেকর্ড উৎপাদনের কারণে চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবার বিদেশে রপ্তানীতে করতে পারবে। লস্কপুর ভ্যালিতে ২০০৫ সালে ১শ কোটি কেজির উপরে চা উৎপাদন হয়েছিল। এর পর সেটি কমে ৯৯ লাখ কেজি হয়। গত বছর ৮ মাসে উৎপাদিত হয়েছে ৮২ লাখ ৫৯ হাজার ৯শ কেজি চা। উল্লিখিত সময়ে এ বছর উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮শ ২১কেজি চা। যা গত বছরের চেয়ে ৩০ লাখ ৩৬ হাজার কেজি বেশি। এবং এটি ভ্যালীর ইতিহাসে এবারই প্রথম।
এর মধ্যে শুধু অক্টোবর মাসেই ভ্যালীতে উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৫৭১ কেজি। ২০১৫ সালে ভ্যালীতে একই সময়ে উৎপাদিত হয়েছিল ১৯ লাখ ১১ হাজার ৭শ ৯৯ কেজি চা। চা উৎপাদনে সাতে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
চলতি বছর ভ্যালীর কোন বাগানেই উৎপাদনে ঘাটতি নেই। প্রতিটি বাগানেই ১৭ থেকে সর্ব্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি উৎপাদন হয়েছে। অথচ গত বছর বেশ কয়েকটি বাগানে উৎপাদনে ঘাটতি ছিল। ভ্যালীর বৃন্দাবন, চাকলাপুঞ্জি. ও চন্ডিছড়া চা বাগানে গত ৮ মাসে ৬৯ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন বেড়েছে। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার শত ভাগের কাছাকাছি চলে গেছে। ভ্যালীর নালুয়া চা বাগান ২০১৬ সালে ১৩ লাখ ৩০ হাজার, চান্দপুর চা বাগানে ১১ লাখ ৮৭ হাজার কেজি এবং আমু চা বাগানে সর্বেŸাচ্চ ১০ লাখ ৮২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। একই ভাবে লস্করপুর ২৭ শতাংশ, ন্যাশনাল টি কোম্পানীর চন্ডিছড়া চা বাগান ৩৬ শতাংশ, লালচান্দ চা বাগানে ৩৬.৯৭ শতাংশ, বৃন্দাবন চা বাগানে ৩১ শতাংশ ও জগদীশপুর চা বাগানে ৩৬ শতাংশ চা উৎপাদন বেশি হয়েছে।
দেউন্দি টি কোম্পানীর দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চলতি বছর আগাম বৃষ্টি, অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ, নতুন চা এলাকা সম্প্রসারণ, ক্লোন চা গাছের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং চা বোর্ডের নজরদারির ফলে চলতি মৌসুমে চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চা উৎপাদিত হয়েছে।
লস্করপুর ভ্যালীর চেয়ারম্যান ও চাকলাপুঞ্জি চা বাগানের ব্যবস্থাপক এস সি নাগ জানান, চা বোর্ড এবং বাগান ব্যবস্থাপকদের আন্তরিক চেষ্টা, আগাম ও পরিমিত বৃষ্টি এবং চা শ্রমিকদের আপ্রাণ চেষ্টার কারণেই এবার ভ্যালীতে রেকর্ড উৎপাদন বেড়েছে। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
বাহুবলের আমতলী চা-বাগানের ম্যানেজার কাজী মাসুদুর রহমান বলেন, এবার বছরের শুরু থেকেই নিয়মিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে চায়ের ভাল ফলন হয়েছে। তিনি জানান, নতুন করে চারা রোপন করে চা পাতার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নানা ভাবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মাইনউদ্দীন আহমেদ জানান, চা উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবস্থাপনা দিক থেকে দক্ষতার পাশাপাশি প্রকৃতির উপরও নির্ভর করতে হয়। এবছর প্রকৃতি অনেক সহায় হয়েছে। ফলে হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটের বাগানগুলোতে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর রোগ-বালাইয়ের আক্রমণও ছিল কম। চা বাগানগুলোতে রেকর্ড উৎপাদনে চা শ্রমিকদের মধ্যে আনন্দ দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি উজ্জীবিত হচ্ছে চা শিল্পের সাথে জড়িতরা।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম