কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগাম জাতের বামন বা খাট নারকেল চাষ করা হয়েছে। প্রায় দুই লক্ষ গাছে আগামী দুই বছরের মধ্যে নারকেল ধরবে । বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা আগাম উন্নত ও খাট জাতের সিয়াম ব্লু ও সিয়াম গ্রীণ নারকেল গাছে ফল ধরবে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে আগে থেকেই লম্বা জাতের নারকেল চাষের প্রচলন আছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এগুলোর ঝড়ো হাওয়া সহনশীলতা কম। পক্ষান্তরে খাটো আধুনিক জাতগুলো অল্প সময়ে ফল দেয়া আরম্ভ করে, ফলদান ক্ষমতা থাকে অনেক বেশি এবং ঝড়ে ভেঙে পড়ে না।
নারকেল গাছের লবণাক্ততা সহিষ্ণু গুণ খুব বেশি। বর্তমান সরকার দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করছে। এ বিবেচনায় ভিয়েতনাম থেকে খাটো ও উন্নত জাতের নারকেল চারা এনে দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশে ব্যাপক সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূলবর্তী ২৪টি জেলায় ৪০ কোটি নারকেল গাছ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র এক লক্ষ গাছ। নারকেল গাছ মাটির ক্ষয়রোধে খুবই উপযোগী। এজন্যে সমুদ্র তট, নদী তীর কিংবা পুকুর পাড়ে নারকেল গাছ বেশি দেখা যায়।
দেশি নারকেল গাছে ফল আসতে সাত থেকে আট বছর অপেক্ষা করতে হয়। বাৎসরিক ফলন ৫০ থেকে ৬০টি। সব গাছ ছাড়িয়ে অধিক উচ্চতার কারণে ফল সংগ্রহ সুবিধাজনক নয়। সামুদ্রিক ঝড়ে অধিক উচ্চতার কারণে এই গাছের পাতা নাগালের বাইরে থাকায় বিপদাপন্ন মানুষ আশ্রয় খুঁজে পায় না।
এসব সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে প্রকল্পের পক্ষ থেকে ভিয়েতনাম থেকে সিয়াম ব্লু ও সিয়াম গ্রীণ নারকেল গাছ আমদানি করা হয়েছে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটির সাথে সাদৃশ্য থাকা ভিয়েতনামের এসব নারকেল গাছ থেকে অতি দ্রুত আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। খাটো জাতের হওয়ায় ফল থাকে হাতের নাগালে এবং এজন্য কোন ফল পাড়া মানুষের প্রয়োজন নেই। বছরে একটি গাছ থেকে ১৫০ থেকে ২০০টি ফল পাওয়া সম্ভব।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ভিয়েতনাম থেকে বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লক্ষ চারা আমদানি করা হয়েছে। ৫০০ টাকা দরে নাটোরসহ দেশের ৬০টি হর্টিকালচার সেন্টারে এসব চারা বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারা আগ্রহ সহকারে চারা কিনছেন।
নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স.ম. মেফতাহুল বারি জানান, নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার চারা বিক্রি হয়েছে। নাটোর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা চারা কিনতে আসছেন। নারায়নগঞ্জের নাটোর বহুমুখী নার্সারি, সিরাজগঞ্জের কামরুল ইসলাম এবং বগুড়ার ধুনট এলাকার হায়দার আলী প্রায় ২০টি করে চারা কিনেছেন। নাটোর বহুমুখী নার্সারির পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, চারাগুলো নারায়নগঞ্জে নিয়ে বিক্রি করা হবে।
নাটোরের সফল ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফলচাষি সেলিম রেজা বলেন, ভিয়েতনামের এই নারকেল গাছ দেশে আসার পর প্রথমেই আমি ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে ১৬ ফেব্রুয়ারি বাগানে লাগিয়েছি। আহাম্মদপুরের দুই বিঘার বিদ্যমান শরিফা ফলের বাগানে ১২ হাত ব্যবধানে ১০২টি সিয়াম ব্লু নারকেল গাছ রোপণকারী সেলিম রেজা বলেন, জৈব সারের সাথে ট্রাইকোডারমা সহযোগে গাছ লাগালে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের মধ্যে ফল লাভে আশাবাদী সেলিম রেজা বলেন, সিয়াম নারকেল জনপ্রিয়তা পাবে। উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এস.এম. কামরুজ্জামান বলেন, দেশের উপকূলীয় এলাকায় নারকেল খুবই সম্ভাবনাময়। দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি অর্জনে সিয়াম জাতের নারিকেল গাছ ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বছরব্যাপি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মেহেদী মাসুদ বাসস’কে বলেন, শুধু উপকূলীয় এলাকা নয়, শুকনো মৌসুমে সেচের সুবিধা থাকলে অথবা বসতবাড়িতে সারা বছরই এই নারকেলের চারা রোপণ করা যায়। বাসা বাড়িতে পানির ব্যবহার হয় এমন স্থানে চারা রোপণ করে প্রতিদিন পানি ছিটিয়ে গাছ পরিচর্যা করতে পারেন গৃহিনীরা। এতে করে নিয়মিত অর্থ উপার্জনের উৎসে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
দেশে পাঁচ বছরে ১০ লক্ষ চারা রোপণ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, পরবর্তীতে এসব গাছ মাতৃগাছ হিসেবে বীজ সরবরাহ করবে। নারকেল গাছের প্রতিটি উপাদান মূল্যবান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এসব নারকেল গাছ দেশের মানুষের কাছে সম্পদ হিসেবে সমাদৃত হবে একদিন।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম