‘কৃষকরা এখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে ধানের চাষাবাদ করছেন’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের সর্বত্র আমন ধানের ভালো উৎপাদন ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় কৃষকরা অত্যন্ত খুশি। এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তারা চূড়ান্ত পর্যায়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত। এতে অনেক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা জানান, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন বাজারে আমন ধান ৬৪০ টাকা থেকে ৭১০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার প্রতি মণ আমন উৎপাদনে ৪২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে।এ বছর আমন চাষ মৌসুমের শুরুর দিকে শুষ্কতার কারণে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এ সময় তারা সেচের মাধ্যমে চারা রোপণ করেন। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকরা স্বস্তি পান।
কৃষিবিদগণ জানান, কৃষকরা এবার উচ্চ গণগতমান সম্পন্ন বিনা-৭, বিআর-৪৮, ৪৯, ৬২, ৭১ ও ৭২ এবং স্থানীয় জাতের আগাম বাসমতি ধানের আবাদ করেন। এতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ অধিক ফলনের জন্য কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ ও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের (ডিএই) অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় তিন লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রায় তিন লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে এর চাষ হয়েছে। তিনি জানান, এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ২ দশমিক ৬৬ টন আমন ধান উৎপাদনে ডিএই’র লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও কৃষকেরা কমপক্ষে ২ দশমিক ৯৩ টন করে ফলন পেয়েছেন।
পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, এই মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান ৭শ’ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকা, সার ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং ধান গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় এই মৌসুমে কৃষকরা আমনের ভালো ফলন আশা করছেন।
একই উপজেলার বারগাচ্ছি গ্রামের আদর্শ কৃষক আবদুর রহিম জানান, এ বছর তিনি প্রতি বিঘা জমিতে ১৮ থেকে ২০ মণ করে ধান পেয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষাবাদে সুবিধা হয়েছে বলে জানান তিনি। তানোর উপজেলার কচুয়া গ্রামের কৃষক নবিবুর রহমান (৪৩) বলেন, ‘আমি এ বছর ৬৮ শতাংশ জমিতে বন্যা সহিষ্ণু উচ্চ জাতের আমন ধানের চাষ করেছিলাম। এতে আমি প্রতি শতাংশ জমিতে ২৫ কেজি করে ধান পেয়েছি। গত বছর যা ছিল মাত্র ১৮ কেজি।’ তিনি বলেন, ‘আমি এ জাতের ধান চাষের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বীজ ও কারিগরি সহযোগিতা পাই। আমি আগামী মৌসুমে এ জাতের ধান আরো বেশি আবাদ করব।
’ মান্দা উপজেলার কালিগঞ্জের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি প্রতি একর জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ব্যয়ে চার একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেন। এতে তিনি প্রতি একর জমিতে ৩৫ থেকে ৩৬ মণ করে ফলন পেয়েছেন। তিনি জানান, নতুন এই ধান তিনি বাজারে ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন এবং আশা করছেন এবার তার ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা লাভ হবে।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনুকূল আবহাওয়া এবং সময় মতো বৃষ্টি এবার এখানে আমন ধানের বাম্পার ফলনে সাহায্য করেছে। এ বছর এই ধানের দামও ভালো।’ তিনি বলেন, ‘কৃষকরা এখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে ধানের চাষাবাদ করছেন। তারা আর ক্ষেতে অতিরিক্ত সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করেন না।’
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম