কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার নদী ও ঝর্ণা থেকে বালু লুটপাটের মহাউৎসব চলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি করে আসছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করায় একদিকে যেমন নদী ও গারো পাহাড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে নদীর দু’পাড় ও রাস্তাঘাট ভেঙে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় সোমেশ্বরী, কালঘোষা, মহারশী ও মালিঝি নদীসহ কয়েকটি পাহাড়ি ঝর্ণা রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার এসব নদী ও ঝর্ণাসহ বন-বিভাগের পাহাড় থেকে স্যালো মেশিন দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করে যাচ্ছে। সন্ধ্যাকুড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাহ জাহান, বাকাকুড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, ছামিউল হক, নকসী গ্রামের ডা. গোলাপ হোসেনসহ একাধিক গ্রামবাসীর অভিযোগ অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব বালু লুটপাট করে আসছে।
রেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কালঘোষা নদীর ফুলহাড়ি, বাকাকুড়া, সোমেশ্বরী নদীর দুপুরীয়া, আয়নাপুর, বালিজুড়ি, তাওয়াকুচা, মহারশী নদীর গোমড়া, রামেরকুড়া, পাগলারমুখ, মালিঝি নদীর তিনানী ও গজনী ফরেস্ট বিট এলাকার দরবেশতলা, মালিটিলা, হালচাটি ও গান্ধিগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক স্যালো মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এসব বালু ট্রাক ও ট্রলিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। ট্রাকে অবাধে বালু পরিবহনের ফলে উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ উপজেলায় অর্ধশতাধিক অবৈধ বালু ব্যবসায়ী রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বালু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট হারে নজরানা দিয়ে এসব বালু ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বালু ব্যবসায়ীরা তাদের নির্দেশ না মেনে জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করে আসছে।
জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্তে এলে সেদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। পরে আবার পুরোদমে শুরু হয়। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে এ উপজেলার নদী ও ঝর্ণা থেকে অবাধে বালু লুটপাট করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ২/১ দিনের জন্য বন্ধ থাকলেও পরে আবার তা পুরোদমে শুরু হয়। ধানশাইল ও কাংশা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সুজন কুমার সুম ও রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন জানান, বাধা-নিষেধের পরেও অবৈধ প্রভাবশালীরা কোনো বাধা-নিষেধ মানছে না। জোরপূর্বক তারা বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় থেকে। অপরদিকে, সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। শেরপুরের জেলা প্রশাসক ডা. এএম পারভেজ রহিম বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ এম ইসলাম