কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সরকারি নির্দেশের তোয়াক্কা না করে সাভারে দখল জমি । শিল্পনগরী সাভার যেন অবৈধ দখলবাজদের স্বর্গরাজ্য। প্রবাহমান নদী, খাল, বিল, জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে মিল-কারখানা, বসতবাড়ি ও দোকানপাট। ফলে বেহাত হচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। চলে যাচ্ছে দখলদারদের হাতে। নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। আর মিল-কারখানার বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়ছে পরিবেশ। হুমকির মুখে জনজীবন। দখলবাজ আর কতিপয় সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে এ দখল বাণিজ্য, এমনই অভিযোগ সাভারবাসীর।
তুরাগ, বংশী ও ধলেশ্বরী শাখা নদী ও একাধিক খালের তীর দখলের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও হাউজিং কোম্পানিগুলো প্রশাসনের কিছু লোককে ম্যানেজ করে এ দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলকৃত এ জমির মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। দেশে ১/১১ এর পর দখলবাজরা চুপচাপ থাকলেও আবার নদী, খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। এক সময় যে নদীতে মালবোঝাই জাহাজ চলত, আজ তা কেবলই স্মৃতি। কারণ নদীর দুই ধার এমনভাবে দখল করা হয়েছে যে এর গতিপথ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
তুরাগ, বংশী, ধলেশ্বরী নদী দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশ করলেও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এ দখল প্রক্রিয়া।সাভারে জমির চাহিদা ও মূল্য ক্রমবর্ধমান। একই সঙ্গে অবৈধভাবে সরকারি ভূ-সম্পত্তি দখলের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তিতে গড়ে উঠছে স্থাপনা। সাভার বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশী নদীর পূর্ব পাড়ের ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও বসতবাড়ি। কর্ণপাড়া খালের বেশ কয়েকটি স্থানে কারখানা গড়ে উঠেছে। খালে মাটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন।
সাভারের আশুলিয়ার ৫ শতাধিক শিল্প কারখানার বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য নয়নজুলি খালটি এখন ছোট নর্দমায় পরিণত হয়েছে। একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক অবৈধভাবে এ খালটির দুই পাশ ভরাট করে তাদের শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছেন। ফলে ৪০ ফুট প্রশস্ত খালটি এখন ৪ ফুটে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা জেলার প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা একাধিকবার সরেজমিনে তদন্ত করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে সাভারের সিমান্ত ঘেঁষে তুরাগ নদীর অনেক জায়গাও বেদখল হয়ে গেছে। আমিনবাজার, মিরপুর ব্রিজ সংলগ্ন নদীর পাড়ে মাটি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে অবৈধ নদী বন্দর। ব্রিজের নিচে এবং সংলগ্ন দুই পাড় এখন পাথর, সিমেন্ট ও বালুর ব্যবসা কেন্দ্র। নয়ারহাট এলাকায় বংশী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে ব্যবসা কেন্দ্র। অনেকেই ভুয়া কাগজ পত্র তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি দখল ও দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বংশী নদীর শাখা সাভার পৌরসভার ভাগলপুর, কাতলাপুর, রাজাবাড়ী হয়ে গেন্ডার বিলবাঘিল গিয়ে মিশে ছিল। কিন্তু এই শাখা নদীর আজ কোনো অস্তিত্ব নেই।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও আশুলিয়া-টঙ্গি সড়কের দুই পাশের প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করে দখলে নিয়েছে কতিপয় নামীদামী হাউজিং কোম্পানি। জলাশয়ের আশপাশে সামান্য কিছু জমি ক্রয় করে নানা পন্থায় জলাশয় ভরাট করে সরকারি সম্পত্তি দখল করে নেয়া হচ্ছে। সাভার বাজারের পাশে বংশী নদীর পাড় ঘেঁষে সরকারি জমি (খাস জমি) নামে-বেনামে এবং লিজের মাধ্যমে বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ এম ইসলাম