কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গোপালগঞ্জ, জেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে হাইব্রীড ব্রী-৩ জাতের ধানের চাষ সফল হয়েছে।এখন থেকে এখানে উৎপাদন করা সম্ভব হবে সুস্থ-সবল বীজ। ফলে কৃষকেরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে বেশী দাম দিয়ে বিদেশী বীজ কিনে তারা আর প্রতারিত হবে না। দেশের প্রতিটি স্থানে এ বীজ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের চাল উৎপাদন আরো বাড়বে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বোরো মৌসুমকে টার্গেট করে গোপালগঞ্জে হাইব্রিড ব্রি-৩ ধানের চাষ করা হয়। সেই সাথে শুরু করা হয়েছে বীজ উৎপাদন। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে প্রতি বছরই বোরো মৌসুমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে হাইব্রিড ধানের বীজ আমদানী করা হয়। কিন্তু জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত সমস্যার কারণে চারা না গজালে লোকসানের মুখে পরে কৃষকরা। কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামে কৃষক হাবিবুর রহমানের জমিতে ব্রী উদ্ভাবিত ব্রী-৩ জাতের ধানের চাষ করা হয়। এতে ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। আগামী বোরো মৌসুমেএলাকায় নিজের দেশের উৎপাদিত বীজ দিয়ে চাষাবাদ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন এলাকার অনেক কৃষক।
এ জাতের ধান আবাদ করলে ১৪৫ দিনেই ফসল ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। আর একর প্রতি ফলন পাবে প্রায় ৯০ মণ। নিজেদের প্রয়োজনীয় ধান রেখে বাড়তি ধান দিয়ে বীজ তৈরী করলে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা কেজি দরে বিদেশী হাইব্রিড ধানের বীজ কিনতে হবে না। এ জাতের ধানের চাষ করলে কৃষকরা একদিকে যেমন আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবে অন্যদিকে বেশী দাম দিয়ে বিদেশী বীজ কিনে প্রতারিত হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় চরবয়রা ঘোনাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয়, ভাংগা, ফরিদপুর কার্যালয়ের আয়োজনে এবং গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মাঠ পয্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কিংকর চন্দ্র দাস। এসময় ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয়, ভাংগা অফিসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আমীর হোসেন, গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্রি গাজীপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ হাফিজার রহমান উপস্থিত ছিলেন। এতে জেলার ৫ উপজেলার ৪০ জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরে কৃষক হাবিবুর রহমানের জমি থেকে কাঁটা হয় এ ধান।
কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, বোরো মৌমুমে অধিক দামে বেদেশী বীজ কিনে রোপন করা হতো। কিন্তু সে বীজ অনেক সময় চারা অঙ্কুরিক হয় না। এতে কৃষকদের লোকসান দিতে হয। যে কারণে এবছর উৎপাদিত ব্রী-৩ ধান রোপন করেছি। ধানও ভাল হয়েছে। এখান থেকে নিজের জন্য ধান রেখে বীজ তৈরী করব।
ব্রি’র গাজীপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: হাফিজার রহমান জানান, আমন মৌসুমে কৃষক তার নিজ জমিতে এ হাইব্রিড জাতের বীজ ধান উৎপাদন করে বোরো মৌসুমে আবাদ করতে পারবেন। এতে কৃষককে বেশী দামে হাইব্রিড ধানের বীজ কিনতে হবে না। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং তারা প্রতারণার হাত থেকে বেঁচে যাবে।
ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয়, ভাংগা অফিসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আমীর হোসেন বলেন, এ ধানের চাষ করে ১৪৫ দিনের মধ্যে কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। হেক্টর প্রতি ফলন ৯ মেঃ টন অর্থাৎ একরে ৯০ মণ ধান পাবেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কিংকর চন্দ্র দাস জানান, খুব সহজ আর অল্প খরচে এ পদ্ধতিতে কৃষকরা বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। এক একর জমিতে কৃষকদের ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। আর একরে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, গোপারগঞ্জে প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে হাইব্রীড ধানের চাষ হয়ে থাকে। ধানের উৎপাদন বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে দেশীয় উৎপাদিত বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কারণ বিদেশ থেকে আমদানীকৃত বীজ রোপন করে কৃষকরা প্রতারিত হয়। দেশীয় এ বীজ ব্যবহার করলে আমাদের জন্য সফল বয়ে আনবে এবং কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম