এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নানা বয়সের কয়েক শত মানুষ পলো নিয়ে এই উৎসবে অংশ নেয়। এদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মাছ ধরে সীমাহীন আনন্দে ভেঁসেছে।শত বছরের ঐহিত্যবাহী মাছ ধরার এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে নদী রক্ষার দাবী করেছেন আয়োজকরা।নরসিংদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী-নালা খাল-বিলের ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি’ ইতিমধ্যে শুকিয়ে এসেছে। আর সে সব শুকনো জলাশয়ে প্রতিবছরের আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারীদের পলো বাওয়া উৎসব।
সময়টা এলেই বিভিন্ন এলাকা শিকারীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দল বেঁধে উৎসব মুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেয়। পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্যই হলো দল বেঁধে পলো নিয়ে (বাঁশ দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি ঝাঁপি) মাছ ধরা। আর এই উৎসবকে ঘিরে সৌখিন মাছ শিকারীরা গড়ে তুলেন পলিয়া নামে একটি মৎস শিকারী সমিতি। ব্যাপক প্রস্তুতি না থাকলেও সমিতির সৌখিন মাছ শিকারীরা নিজেদের আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণের পর সবাইকে জানিয়ে দেন। এ ঘোষনার পর আগ্রহী সৌখিন মাছ শিকারীরা বাঁশের তৈরি পলো নিয়ে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেয়। পর্যায়ক্রমে একেক নদীতে বা জলাশয়ে একেক দিন এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার জংলী শিবপুরের আড়িয়াল খাঁ নদীতে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার রায়পুরা, শিবপুর, বেলাব ও মনোহরদী উপজেলা থেকে কয়েক শত বিভিন্ন বয়সের সৌখিন মাছ শিকারী পলো নিয়ে এই উৎসবে অংশ নেয়। সকাল ১০টায় নদীর জামতলা ঘাট থেকে মাছ শিকার শুরু হয়ে বিকাল ২টায় জংলী শিবপুর বাজার ঘাটে গিয়ে শেষ হয়। পলো বাওয়া উৎসবে একজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও আনন্দে মেতে ওঠেন।
উৎসবে শৈল, গজার, বোয়াল, আইর, কালনা ও টাকিসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন ভীড় জমান নদী ঘাটে। আয়োজকরা জানায়, নদী বেঁচে থাকলে বেঁচে থাকবে ঐহিহ্যবাহী এই পলো উৎসব। তাই পলো বাওয়া উৎসব থেকেই নদী রক্ষার দাবি জানানো হয়। আয়োজক শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, দিন দিন হারিয়ে যাওয়া বাঙ্গালীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতেই যেন ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন হয়।