কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ লক্ষ্মীপুর জেলার সুপারীর খ্যাতি দীর্ঘদিনের। বাড়ির ভিটায় কিংবা কৃষি জমির পাশে তৈরীকৃত বাগানের সুপারী গাছে ফলন হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সুপারযে বর্তমানে বিভিন্ন হাটবাজারে কেনা-বেচায় ব্যস্ত সুপারি ব্যবসায়ীরা। এ মৌসুমে জেলায় ৩২৫কোটি টাকার সুপারীর উৎপাদন হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এদিকে এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারীর ভাল দাম পেয়ে খুশি চাষী গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় ৬হাজার ৩৫৫হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে রায়পুর উপজেলায় ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় এক হাজার ৯০০হেক্টর, রামগঞ্জে ৮৯০হেক্টর, কমলনগরে ৩৭৫ হেক্টর ও রামগতি উপজেলায় ৪০হেক্টর। এসব বাগানে এ বছর প্রায় সাড়ে ১২হাজার মেট্রিক টন শুকনো সুপারি ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার দর ৩২৫কোটি টাকা।
সংশ্লিরা জানান, বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে। পরে এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারী পুরোপুরি পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। মূলত কার্তিক মাসের শেষে আর অগ্রহায়ণ মাসই সুপারীর ভরা মৌসুম। জেলার রায়পুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশী সুপারীর ফলন হয়। এখানকার সুপারীর প্রায় ৪০ ভাগ নদী-নালা, সংযোগ খাল, ডোবা-পুকুরে, পানি ভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অপর অংশ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
সুপারী বিক্রির প্রধান মোকাম হচ্ছে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর শহর, দালাল বাজার, চন্দ্রগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন, রায়পুর উপজেলা শহর, হায়দরগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, খাসের হাট, মোল্লার হাট। এসব বাজার থেকে ঢাকা চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা সুপারী কিনে নেন। এ বছর প্রতি কাহন (১২৮০ পিচ) সুপারী ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পোন সুপারি (৮০ পিচ) প্রকারভেদে ৭০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশী।
চাষীদের অভিযোগ, সুপারি গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তেমন কোন সহযোগিতা এবং তদারকি নেই। এ কারণে রোগ বালাইয়ে গাছ মরে যাওয়াসহ আশাতীত ফলনে বিঘ্ন ঘটে। গাছ রোপণ ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণে কৃষি বিভাগের লোকজনের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে লক্ষ্মীপুরে এ অর্থকারী ফসল আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো- একথা অনেক কৃষক মনে করেন।
রায়পুরের চর আবাবিল গ্রামের সুপারি চাষী ইসমাইল হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পাকা সুপারীর দাম অনেক বেশী। সুপারীর ভাল দাম পাওয়ায় তিনি খুশী। সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজরের সুপারী ব্যবসায়ি কামাল হোসেন জানান, এবার গত ২০দিনে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকার সুপারী কিনে পাইকারী দরে বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচা-পাকা সুপারীর দাম কিছুটা বেশী। এতে ভাল দাম পেয়ে চাষীরাও খুশি। এ মৌসুমে সুপারীকে ঘিরে জেলায় ৫শ’ কোটি টাকার লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম