কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের শেষ প্রান্ত হিমালয়ের পাদদেশে প্রকৃতির সবুজ সমারোহে বদলে যাচ্ছে তেঁতুলিয়ার দৃশ্যপট। বিংশ শতাব্দীর আগে অনেকেই তেঁতুলিয়ার অর্থনীতির প্রধান উৎস পাথর ও আখের জন্য বিখ্যাত বলে জানত। কিন্তু বর্তমানে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার প্রকৃতির সম্ভারে চা-বাগানের সবুজ লীলা ভূমিতে বদলে গেছে।
এরআগে হিমালয় থেকে প্রবাহিত মহানন্দা নদীতে ভেলা ভাসিয়ে শ্রমিকদের দল বেধে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখা যেত।
অপরদিকে সমতল ভূমি খননপূর্বক ভজনপুর, বুড়াবুড়ি, দেবনগর, বালাবাড়ী, ডাহুক, কালীতলা ও কাজী পাড়া নামক স্থানের নুড়ি পাথর সংগ্রহের কৌশলটি আবার মহাননআদর পাথর সংগ্রহ থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। ১৫-২০ জন শ্রমিক মিলেই একটি দল, যারা সমতল ভূমি ১৫-২০ ফিট পর্যন্ত খনন করে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করত। ঐ সমস্ত এলাকার উঁচু ঢিবি দেখে অনায়াসেই মনে হয় ছোট ছোট পাহাড়ী টিলা ভূমি। যে কারণে তেঁতুলিয়া পাথরের জন্য খ্যাত ছিল।
এখানকার সমতল ভূমি দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বেশ উচুঁ। বেলে দো-আশমাটিতে প্রচুর আখও জন্মে। তৎকালীন সময়ে আখ মাড়াই পদ্ধতি ছিল অন্য রকম। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে পূর্বের সেই সব অবস্থা। তেঁতুলিয়ায় শুধু আখ ও পাথরই নয়, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে চা, কমলা, আনারস, লিচু, আঙ্গুর ও আপেল চাষও হচ্ছে। তেঁতুলিয়া সদরের অনাচে-কানাচে ব্যাপক ভাবে চা চাষে ঝুঁকেছে চাষিরা।
চা চাষ হচ্ছে দু’ভাবে বৃহৎ ও ক্ষুদ্রাকারে। বৃহৎভাবে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট, ডাহুক টি এস্টট, আগা ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড কমার্স লিঃ টিটিসিএল নামের কয়েকটি কোম্পানি। আর ক্ষুদ্রাকারে উৎপাদন করেছে প্রান্তিক চা চাষিরা। এদের বিপুল সংখ্যক অর্থের যোগান দিচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তেঁতুলিয়ার রওশনপুর, ডাহুক, লোহাকাচী, সারিয়াল এলাকা এখন চা বাগানে পরিপূর্ণ।
যেদিকে চোখ যায় সেদিকে সবুচ কচি পাতায় ভরা চা বাগান অপরূপ সৌন্দর্যময় ভূমি। এখানকার উৎপাদিত চা সম্পূর্ণ আর্গানিক- যা হিমালয়, দার্জিলিং ও সিলেটের চা-এর চেয়ে উন্নত ও সুস্বাদু। তেঁতুলিয়ার চা উৎপাদনের জন্য ডাহুক নদীর তীরে তৈরি হয়েছে টিটিসিএল কোম্পানির টি ফ্যাক্টরী লিঃ। তেঁতুলিয়া সদর থেকে ৮ কিঃ মিঃ দূরে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের ধারেই এলজিইডির তত্ত্বাবধান করা হয়েছে কমলা বাগান।
এছাড়াও ঠুনঠুনিয়া গ্রামের হোসেন আলী সাইফুল প্রযুক্তি নার্সারী করে বসতবাড়ির এক খন্ড জমিতে আঙ্গুর, কমলা, আপেলসহ নানা ধরনের ফুল ও ফলের বাগান তৈরি করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মেলায় নিজের নাম লিখেছেন। তেঁতুলিয়ার প্রায় বাড়িতের দু’একটি ফলন্ত আঙ্গুর ও কমলা গাছ রয়েছে। রওশনপুরে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট এর নার্সারীতে প্রায় ২ হাজার অধিক বিভিন্ন প্রকার ফল-ফলাদি ও ওষুধি গাছের বিপুল সমারোহ রয়েছে।
এদিকে সারিয়াল জোত, কাজীপাড়া, দর্জিপাড়া ও কানকাটা এলাকায় দেশী আনারস চায়ের পাশাপাশি আনারস চাষিরা সিঙ্গাপুরী আনারস চাষও করছে। এছাড়াও কাজী ফার্ম, অ্যাকুয়া ব্রিডার্স নামের দুটি কোম্পানি বাণিজ্যিক ভাবে মুরগীর ডিম ও বাচ্চা পালন করে লাভবান হচ্ছে এলাকায় বিক্রি করে। এ ফার্মগুলো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলে মন ও নয়ন আনন্দে ভরে উঠে। এদিকে সার্কভুক্ত দেশ গুলোর সঙ্গে অনায়াসে ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার্থে ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধাকে স্থল বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বর্তমানে চা বাগানের সবুজের সমারোহ প্রকৃতির এক দৃশ্যপট।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম