কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ঢাকার বাতাসে ধুলাবালি, কার্বন মনোক্সাইড, ওজন, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদির মাত্রা বাড়ার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের তুলনায় ঢাকার বাতাসে থাকা ধুলাবালিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঘনঘন রাস্তা খনন, ড্রেনের ময়লা রাস্তায় পাশে উঠিয়ে রাখা, নির্মাণ-সামগ্রী পারাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মতিউর রহমান বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগ-জীবাণু মিশ্রিত ধুলা ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুস ক্যান্সার, শ্বাসজনিত কষ্ট, হাঁপানি ও যক্ষাসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর শীতের শুরুতে ধুলাবালির কারণে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এখনই পরিবেশ দূষণ বন্ধ না করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘টেকসই বায়ু ও নির্মল পরিবেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ুর গুণগতমান পরিমাপ করার লক্ষ্যে কেইস প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় ৩টি, চট্টগ্রামে ২টি, রাজশাহী ও খুলনা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট ও বরিশাল শহরে ১টি করে সারাদেশে মোট ১১টি সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ স্টেশন চালু রয়েছে। এই সকল স্টেশনের মাধ্যমে ওই শহরগুলোতে বায়ুদূষণের উপাদানসমূহের (পিএম-১০,পিএম-২.৫, ওজোন, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ইত্যাদি) পরিমাণ সার্বক্ষণিকভাবে পরিমাপ করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিমাপক অনুযায়ী, বাতাসের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে ‘সবুজ বা স্বাস্থ্যকর’, একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে মধ্যম বায়ু বলা হয়, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। একিউআইর মাত্রা ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে সতর্কতামূলক বায়ু বলা হয়, যেটা মানুষের জন্য মৃদু ক্ষতিকর।
এদিকে, বাতাসের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের মাত্রা ১৫১ এর উপরে উঠলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একিউআইর মাত্রা ১৫০ থেকে ২০০ পিপিএম হলে অস্বাস্থ্যকর । ২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম হাতে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং মাত্রা ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম হলে তা চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
টেকসই বায়ু ও নির্মল পরিবেশ (সিএএসই) প্রকল্পের প্রতিদিনের একিউআই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকার একিউআই মাত্রা ৩০৯ পিপিএম, চট্টগ্রামের ১৯৫ পিপিএম, গাজীপুরের মাত্রা ২০৫ পিপিএম, সিলেটের ১০৯ পিপিএম, রাজশাহীর মাত্রা ১৫৯ পিপিএম এবং বরিশালের মাত্রা ২৩৬ পিপিএম। নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকার একিউআই মাত্রা ১৮৩ পিপিএম, চট্টগ্রামের ১২২ পিপিএম, গাজীপুরের মাত্রা ১৬৩ পিপিএম, নারায়ণগঞ্জের ২৪২ পিপিএম, সিলেটের মাত্রা ৮৭ পিপিএম, খুলনার ২৯৭ পিপিএম, রাজশাহীর মাত্রা ১৪৩ পিপিএম এবং বরিশালের মাত্রা ২০৫ পিপিএম।
অর্থাৎ বিগত বছরের একই সময়ের ব্যবধানে দেশের প্রত্যেকটি বিভাগের বাতাসে ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু ঢাকা একিউআইর পিপিএমের মাত্রা রয়েছে ৩০৯, যা চরম পর্যায়ের ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থানে।
টেকসই বায়ু ও নির্মল পরিবেশ (সিএএসই) প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একিউআই ঊর্ধ্বমুখী থাকে। তবে মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত গড় একিউআই স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। মূলত সেপ্টেম্বর নাগাদ দেশের বাতাসে ধুলাবালি ও অন্যান্য ধুলিকণার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় একিউআই বেড়ে যায়।
কৃপ্র/ এম ইসলাম