কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কুড়িগ্রাম জেলায় গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর বেশী জমিতে এ বছর আমনের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, পাশাপাশি দফায় দফায় বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় ফলন হয়েছে বাম্পার। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, প্রতি হেক্টর জমিতে এ বছর দশমিক ১৮ মে. টন চাল বেশী উৎপাদন হয়েছে। আর এ কারণে জেলায় প্রায় ৬৮ হাজার মে. টন অতিরিক্ত চাল উৎপাদন হবে এবার। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি মৌসুমের শুরুতেই ধানের মূল্য বেশী থাকায় এ বছর ধান চাষ করে বেশ লাভ হবে কৃষকদের। তাতে গত দু’বছরের ক্ষতির পুষিয়ে নিতে পেরেছেন তারা। আর এ কারণে কৃষকরা খুশি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর আমন চাষ হয়েছে ১ লাখ ৭৫০ হেক্টর জমিতে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ফসল কর্তন করে পরিমাপ করে দেখা গেছে, হেক্টর প্রতি গড় ফলন প্রায় ৩ মে. টন। তাতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ২৫০ মে. টন চাল। জেলায় ব্রি ধান-১১ সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়। আর এ জাতের ধানের ফলনও হয়েছে বেশী। গত বছর বিলম্বিত বন্যার কারণে শেষ পর্যন্ত ৮৩ হাজার ৫২ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করা সম্ভব হয়। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয় ২ দশমিক ৮২ মে. টন। মোট উৎপাদন হয় ২ লাখ ৩৪ হাজার ২০৬ মে. টন চাল। পোকার আক্রমণ ও খরার কারণে ফলন কমে যায়।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার আমনের শুরুতে খরার প্রকোপ থাকলেও কৃষকরা সেচ দিয়ে রোপন শুরু করেন। আর আগাম বন্যার কারণে পরবর্তীতে বন্যাপ্রবণ জমিগুলোতে চাষ করা হয় আমন। সেপ্টেম্বরে বড় ধরনের বন্যা না হওয়ায় রক্ষা পায় আবাদ। তার উপর দফায় দফায় প্রশান্তির বৃষ্টিতে ধানগাছ হৃষ্টপুষ্ট হতে সহায়তা করে। ছিল না পোকার আক্রমণও। তাই ধানের ফলন হয়েছে বাম্পার। মাঠের অধিকাংশ ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। চড়া দামে ধান বেচে আলুসহ রবিশষ্য চাষে নেমে পড়েছে কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার প্রতাপ গ্রামের কৃষক রানা খান জানান, তিনি ৮৫ শতক জমিতে ব্রি-ধান-১১ চাষ করেছেন। প্রায় ৫০ মণ ধান পেয়েছেন। গত বছর পেয়েছিলেন ৪৫ মণ। একই গ্রামের কৃষক আব্দুল আউয়াল ১ একর জমিতে ৬০ মণ ধান ফলিয়েছেন এবার। গত বছরের চেয়ে ফলন বেশি পেয়েছেন তিনি। শুধু ফলন নয়, বর্তমানে ধানের বাজার নিয়েও সন্তুষ্ট কৃষকরা। তারা জানান, হাট-বাজারে বর্তমানে নতুন ধানের দাম প্রতি মণ জাতভেদে ৭৫০-৮০০ টাকা। যা গত দু’ মৌসুমের চেয়ে অনেক বেশী। প্রতাপ গ্রামের জনাব মন্ডল জানান, এ বছর এক মণ ধান আবাদে খরচ পড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা। প্রতিমণ ধানে প্রায় আড়াইশ টাকা লাভ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গেল দুই বচ্চর ধানোত লোকসান খাচি। এবার মনে হয় ওয়াশিল হইবে’।
উলিপুর উপজেলার কাগজিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন ও আবুল কাশেম জানান, অন্যান্য বছর কারেন্ট পোকা ও লেদা পোকায় ধানক্ষেতের অনেক ক্ষতি করে। এবার ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে পোকার আক্রমণ কম হয়েছে। ফলে বেচে গেছে কীটনাশক প্রয়োগের খরচ। আর ফলনও হয়েছে বেশী।
এদিকে কয়েকটি ধানের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতে খাদ্য ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করে মজুদ করছেন। তাই চাহিদা ও দামও ভাল। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী এনামুল হক ও বাবুল বীর জানান, এবার ধানের মান ভাল। ভবিষ্যতে আরো ভাল দাম পাবার আশায় ধান ক্রয় করছেন তারা। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: মকবুল হোসেন জানান, কৃষক ও কৃষি বিভাগের সমন্বিত চেষ্টা এবং সেই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় বাড়তি ফলন করা সম্ভব হয়েছে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম