কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ হুমকির মুখে পড়েছে খুলনা মহানগরীর শহররক্ষা বাঁধ। বাঁধটির মাটির স্তূপ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ভেঙে যাচ্ছে ওয়াকওয়েও। অভিযোগ রয়েছে, সংশিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়সারা কাজ এবং দুর্নীতির কারণে উদ্বোধনের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় বাঁধের এ অবস্থা। তবে কর্তৃপক্ষ বলেছে, জোয়ারের অতিরিক্ত পানির টানে বাঁধের সোল্ডারে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের (সিআরডিপি) অধীনে খুলনা মহানগরীর ‘যশোর রোড, বড় বাজার থেকে জোড়াগেট এলাকা উন্নয়ন’ প্রকল্প নেয়া হয়। যার বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছিল কেসিসি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিএমই-জেবি কোম্পানির সঙ্গে কেসিসির চুক্তিমূল্য ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ২২০ টাকা ৯০ পয়সা। জার্মানির কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এ প্রকল্পে ৭৪ শতাংশ অর্থায়ন করে। বাকি ২৬ শতাংশ সরকারের তহবিল থেকে দেয়া হয়। গত ৬ জুন এ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চুক্তিমূল্যের ১১ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৩১৩ টাকা তুলে নিয়েছে।
গতকাল সিআরডিপির ‘যশোর রোড, বড় বাজার থেকে জোড়াগেট এলাকা উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ঘুরে দেখা গেছে, জোড়াগেট থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত পিচের রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণে পাইলিং করে পাথর ঢালাইয়ের সঙ্গে ব্লক বসানো এবং প্রায় ১৫ ফুট দূরত্বে জার্মান প্রযুক্তির ওয়াকওয়ে (ফুটপাত) নির্মাণ করা হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনে কিছু কিছু স্থানে গাছের চারাও রোপণ করা হয়েছে।
তবে এরই মধ্যে ফুটপাতের বেশকিছু অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কারণ ওই অংশে ব্লকের বাঁধ নেই। আছে বাঁশ, বালির বস্তা ও টিনের বেষ্টনী। প্রায় আধা কিলোমিটার নদীর পাড়ে পাইলিংয়ের বাঁধ নেই। ওয়াকওয়ে ও নদীর পাড়ে নির্মিত পাইলিংয়ের ঢালাইয়ের দূরত্ব আনুমানিক ১৫ ফিট। ওই দূরত্বে ব্লকের অন্তত ১০টি সারি বসানোর কথা থাকলেও বসানো হয়েছে মাত্র দুটি। সেসঙ্গে ওয়াকওয়ের কয়েকটি স্থানে টাইলস ভেঙে গেছে। কিছু স্থানে টাইলস ফুলে উঠেছে। যা কিছুদিনের মধ্যেই উঠে যাবে। এছাড়া ফুটপাতের ওপর বড় বড় গাছের গুঁড়ি রাখা হচ্ছে। ভৈরব নদের এ স্থানে কার্গো থেকে মালপত্র লোড-আনলোড হওয়ার কারণে ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের চাপে রাস্তা আরো বেশি ভেঙে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলছেন, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারা কাজ করে সরকারের অর্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। এ কারণেই উদ্বোধনের পাঁচ মাস না যেতেই শহররক্ষায় নির্মিত বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে।
ঘাট এলাকায় বাসিন্দা আকবর আলী, মুদি ব্যবসায়ী সোহরাব, শ্রমিক আনোয়ারসহ অনেকেই জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চরম দুর্নীতি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রায় আধা কিলোমিটার স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। ঠিকাদাররা বলেছে, বাজেট নেই। তাই ওই অংশে বালির বস্তা, বাঁশ ও টিনের বেষ্টনী দিয়ে বাঁধ বানানো হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই ফুটপাতের মাটির স্তূপ জোয়ারের পানির টানে ভাঙন ধরে। ভারি বর্ষণে তা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়।
এছাড়া বাঁধের দুই পাশে ১৪ ইঞ্চি ব্লক, মাঝখানে শক্ত মাটি, তার ওপর ৩ ইঞ্চি মাটি-বালির মিশ্রণে ওপর জার্মানি টাইলস সাজিয়ে দায়সারা ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় টাইলসের তলে থাকা মাটি-বালির মিশ্রণ বৃষ্টির পানিতে নদীতে চলে যাচ্ছে। ফলে ওয়াকওয়ের ভাঙন বাড়ছে। ৫নং ঘাট থেকে ৭নং ঘাট পর্যন্ত নির্মিত রাস্তায় শক্ত মাটির ওপর ৬ ফুট বালি, তার ওপর ৮ ইঞ্চি পাথরের ঢালাই দেয়া হয়েছে। কাজেই এ রাস্তাটির দীর্ঘ স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, বাঁধটি নির্মাণের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনোদনের একটি জায়গায়ও সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিশু, কিশোর, যুবকসহ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় ঘাট এলাকা মুখরিত থাকে। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হতেই হতেই ভাঙনের কারণে শঙ্কিত তারা।
নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের (সিআরডিপি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছয়ফুদ্দীন বলেন, প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হয় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু জোয়ারের পানির টানে সোল্ডারে ভাঙন ধরেছে। এরই মধ্যে তা সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১১৫ মিটার পথ পাইলিং করে ঢালাই দেয়া হয়নি। তাছাড়া ওয়াকওয়ে ও বাঁধের মাঝে ব্লক নেই, এজন্য নতুন করে আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন প্যাকেজের আওতায় নদী পাড় পুরাটাই পাইলিং করে ঢালাই দেয়ার সঙ্গে পার্কের মতো মনোরম পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনা আছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম