কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরসহ কয়েকটি যায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে আধা নিবিড় বা সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে চিংড়ি চাষিরা সাধারন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে যে উৎপাদন হয়, তার চেয়ে প্রায় ৩০ গুন বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয় সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে।
দেখা গেছে সাধারন চাষ পদ্ধতিতে বছরে যেখানে মাত্র ৩০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হতো, সেখানে আধা নীবিড় চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে হেক্টরপ্রতি প্রায় ১০ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন হচ্ছে। ফলে বাগদা চিংড়ি চাষীরা অল্প জমিতে অধিক উৎপাদনের আশায় আধা নীবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
থাইল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী এলাকায় ৩০০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে আধা নীবিড় (সেমি ইনটেনসিভ) পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু করেন রেডিয়েন্ট শ্রীম্প কালচারের মালিক সফিকুর রহমান চৌধুরী। তার মালিকানাধীন এই চিংড়ি খামারে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হচ্ছে।এই পদ্ধতিতে একরপ্রতি (তিন বিঘা) বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। সেখানে উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের চিংড়ি।
চিংড়ি চাষি সফিকুর রহমান চৌধুরীর মত একাধিক চিংড়ি চাষি এখন আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। নেরডিয়েন্ট শ্রীম্প কালচারের মালিক সফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, ১৪ বছর আগে থেকে তিনি শ্যামনগরের নওয়াবেকী বাজার এলাকায় একটি উন্নত প্রযুক্তির বাগদা চিংড়ি পোনার হ্যাচারি স্থাপন করেন। পিসিআর ল্যাব টেষ্টের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করায় তার পোনার চাহিদাও বেশ।
উন্নত মানের এই বাগদা পোনা দিয়ে তিনি গত বছর নভেম্বর মাসে নওয়াবেকী বাজার এলাকায় ৩০০বিঘা জমি নিয়ে সেখানে ৬০টি পুকুর খনন করেন। প্রতিটি পুকুরের আয়তন এক একর। সম্প্রতি তার ওই চিংড়ি খামারে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রতিটি পুকুর (এক একর আয়তনের ) থেকে তিনি ২৩’শ থেকে ২৫’শ কেজি চিংড়ি উৎপাদন পাচ্ছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
তিনি জানান, প্রতিটি পুকুরে বছরে ২ বার মাছ ধরা যাবে।অর্থাৎ প্রতিটি পুকুর থেকে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মূল্যের বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হবে। আর প্রতিটি পুকুরে খরচ হবে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। অল্প জমিতে অধিক মাছ উৎপাদনের একটি অন্যতম প্রযুক্তি এটি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, অল্প জমিতে অধিক মুনাফা লাভের জন্য এই প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে আধা নীবিড় পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করতে মৎস্য বিভাগ ও কাজ শুরু করছেন। চিংড়ি চাষিরা এই পদ্ধতি চিংড়ি চাষ করতে আগ্রহী হয়েছেন।তিনি বলেন আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। একটি খামারে প্রায় দুই শতাধিক মানুষের প্রতিদিনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়লে দারিদ্রতা নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এই জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়। এ বছর ২২ হাজার মে: টন চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। সাধারন চাষ পদ্ধতিতে হেক্টরপ্রতি বছরে গড়ে ৩০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু আধা নিবিড় পদ্ধতি ব্যবহার করে হেক্টরপ্রতি বছরে (দুই চক্রে) প্রায় ১০ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম