কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশে চিকিৎসা, প্রযুক্তি ও কৃষি বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বৃত্তি কর্মসূচি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস আদের। তার এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দরোজা উন্মোচন হলো। গতকাল সান্দর প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস আদের এই প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্টে পানি শীর্ষ সম্মেলন-২০১৬-তে অংশ নিতে চারদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে এখন হাঙ্গেরির রাজধানীতে অবস্থান করছেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ আনুষ্ঠানিক বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর আরবান এই বৃত্তি কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
এছাড়াও প্রেসিডেন্ট আদের মৎস্যচাষ (পিসিকালচার) এবং জলজ উদ্ভিদ ও জীব-জন্তুর বংশ বিস্তারের (একুয়াকালচার) ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করবেন।
এছাড়াও আদের বলেন, পানি পরিশোধন ও বন্যা আক্রান্ত এলাকায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় হাঙ্গেরি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এ প্রস্তাবে হাঙ্গেরির সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দরোজা উন্মোচিত হলো।’ এম শহীদুল হক বলেন, গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট প্যালেসে পৌঁছালে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস আদের এসে তাঁকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে হাঙ্গেরির সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে হাঙ্গেরি নতুন কিছু করতে আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে হাঙ্গেরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে একটি নতুনমাত্রা গড়ে উঠতে শুরু করেছিলো। কিন্তু, হঠাৎ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এই সস্পর্ক ভেঙ্গে যায় এবং আমরা সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে এসেছি। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, একজন বিশ্বনেতা হিসেবে পানি সমস্যা নিয়ে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রভাব ও দুর্যোগ এবং পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার মত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট আদের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার সরকারের সম্ভাব্য সহায়তার বিষয়ে জানতে চান। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বাড়লে বাংলাদেশের ঝুঁকি এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটার বেড়ে গেলে দুই থেকে আড়াই কোটি লোকের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণার কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প, বনায়ন কর্মসূচি ও বাস্তুচ্যুত লোকজনের জন্য উঁচু ভূমিতে বাড়িঘর নির্মাণসহ জলবায়ু সহিষ্ণু তহবিলের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্ভাবনী স্কিমের ব্যাপারে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টকে ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রকল্প সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জনে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শেখ হাসিনা বিনিয়োগ, আইসিটি ও জাহাজ নির্মাণ খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে আদেরকে ব্রিফ করেন। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহায়তার বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সাড়া বা সহায়তার জন্য অপেক্ষার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহায্য বা অনুদানের চেয়ে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও উদ্ভাবনী ধারণা বিনিময়ের ক্ষেত্রে দুই দেশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। হক বলেন, উভয় নেতা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহায়তার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম