কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শালগম নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর উপযোগী ফসল৷ ১৫-২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় এটি সবচেয়ে ভাল জণ্মে৷ গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আলোর প্রাচুর্য প্রয়োজন৷ অধিকাংশ জাত হিমাঙ্কে বেঁচে থাকতে পারে৷ উচ্চতাপ মাত্রায় স্বাদ কমে যায় এবং মুল দ্রুত আঁশময় হয়ে উঠে৷ অধিক বৃষ্টিপাত শাল গমের জন্য ক্ষতিকর৷ হালকা দো-আঁশ মাটি শালগমের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী৷
চাষের মৌসুম: বাংলাদেশে কেবল রবি মৌসুমে শালগমের চাষ সম্ভব৷ বৃষ্টির মৌসুম শেষ হবার পর ফসল লাগানো উচিত৷ চারা কচি থাকা অবস্থায় বৃষ্টি হলে ফসল সহজেই নষ্ট হয়৷আর্শ্বিন-কার্তিক (নভেম্বরের প্রথম ভাগ থেকে ডিসেম্বরের শেষ ভাগ) বীজ বোনার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়৷
জমি তৈরি:৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়৷
বীজ বপন: পৃথিবীর সব দেশেই ক্ষেতে সরাসরি বীজ বপন করে শালগমের চাষ হয়, কিন্তু বাংলাদেশে কৃষকরা অনেক সময় চারা রোপণ করে শালগম জন্মিয়ে থাকেন৷ বেশি আগাম ফসল ব্যতীত সময় চারা রোপণ পদ্ধতি প্রয়োগ না করাই উত্তম, কারণ রোপণের সময় প্রধান শিকড় ভেঙে গেলে স্ফীত মূলের নিম্নাংশ শাখায়িত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়৷ তাছাড়া, আধুনিক কিছু কিছু জাত বীজ বোনার ৪০-৫০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়৷ সারিতে বীজ বুনলেবা চারা রোপণ করলে সারি থেকে সারি ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট৷ প্রায় এক মাসের চারারোপণ করা যায়৷ চারা রোপণের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারা ২০সেন্টিমিটার বা ৮ ইঞ্চিদূরত্বে রোপণ করতে হবে৷
বীজের হার:
চাষের ধরন একশতকে একর প্রতি হেক্টর প্রতি
সরাসরি বীজ বুনলে ১২গ্রাম ১কেজি ২১৫ গ্রাম ৩কেজি
চারা রোপণ করলে ২.৫ গ্রাম ২৪৫ গ্রাম ৬০০ গ্রাম
সার ব্যবস্থাপনাঃ শালগমের জন্য হেক্টর প্রতি ১০ টন গোবর, ১৫০ কেজি ইউরিয়া ১২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৭৫কেজি মিউরেট অব পটাশ সুপারিশ করা হয়েছে৷ আগাম জাতের বেলায় সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, নাবি জাতের বেলায় ইউরিয়া ও পটাশের অর্ধেক উপরি প্রয়োগ করা ভাল৷
সারের নাম প্রতি শতাংশে প্রতি হেক্টরে
গোবর ৮-১০ কেজি ১০টন
ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম ১৫০ কেজি
টিএসপি ৫০০ গ্রাম ১২৫ কেজি
মিউরেট অব পটাশ ৭০০ গ্রাম ১৭৫ কেজি
সার প্রয়োগের নিয়ম: আগাম জাতের বেলায় সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, নাবি জাতের বেলায় ইউরিয়া ও পটাশের অর্ধেক বাদে বাকি সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং ইউরিয়া ও পটাশের বাকি অর্ধেক চারা গজানোর ১৫দিন পর উপরি প্রয়োগ ক তে হবে৷
পোকা-মাকড় দমনঃ কাটুই পোকা:কাটুই পোকার কীড়া চারা গাছ কেটে নষ্ট করে দেয়৷ এই পোকা দমনের জন্য ৫ সের পানিতে চা-চামচের দেড় চা চামচ পরিমাণ ডায়াজিনন মিশিয়ে ছিটাতে হবে৷
জাব পোকা ও শুয়োপোকা: জাব পোকা ও শুয়োপোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে৷ এই পোকা দমনের জন্য ৫ শতক জমিতে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি কীটনাশকের ৫ চা-চামচ (২৫ মিঃ লিঃ) ১০ সের পানি সঙ্গে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে৷ ক্ষেতে রাসয়নিক ঔষধ দেবার অন্তত সাত দিন পর্যন্ত ঐ ক্ষেতের ফসল বিক্রি বা খাওয়া যাবে না৷
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
• মাটিতে রসের ঘাটতি হলে সেচ দিতে হবে৷ সেচের পর মাটিতে জো এলে চটা ভেঙে দিতে হবে৷
• চারা-লাগানোর পর প্রয়োজন মতো সপ্তাহে দুটি সেচ দেওয়া হয়৷ পরের দিকে ৭ – ১০ দিন অন্তর-সেচ দিলে চলে৷ সার প্রয়োগের পরও সেচ দেওয়ার নিয়ম৷
• আগাছা দমন করে জমি পরিষ্কার-রাখতে হবে৷ তবে খুব গভীরে নিড়ানী চালিয়ে গোঁড়া আলগা করা চলবে না৷ দরকার মতো গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া হয়৷
ফসল সংগ্রহ ও ফলনঃ বাংলাদেশে কৃষকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অত্যধিক পরিপক্ব শালগম বাজারে নিয়ে আসেন৷ এসব-মূল আঁশময় ও স্বাদহীন, ফলে ক্রেতারা এগুলো বারবার কিনতে উৎসাহ বোধ করেন না৷ তাই বীজ বোনার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে শালগম খাওয়ার উপযুক্ত হয়৷ এরপর মূল শক্ত ও আঁশময় হয়েযায়৷ স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়৷ শালগমের ফলন এক শতকে-১০০-১২০ কেজি, একর-প্রতি-১০-১২ টন, হেক্টর প্রতি-২৫-৩০ টন হয়ে থাকে৷
কৃপ্র/ এম ইসলাম