বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান: টমেটো বিশ্বের অন্যতম প্রধান সব্জি। ইহা তরকারী, সালাদ, সুপ, চাটনী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও ইহাকে বিভিন্নভাবে সংরক্ষন ও বোতল জাত করা হয়ে থাকে। টমেটোতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ’সি’ এবং যথেষ্ঠ ’বি’ ও ’এ’ ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আছে। কিন্তু টমেটো উৎপাদনে রোগ বালাই একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে। টমেটোর কয়েকটি মারাত্মক রোগের লক্ষন, কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১। রোগের নাম: গোড়া ও মুল পচা
রোগের কারণ: পিথিয়াম, রাইজোকটোনিয়া, ফাইটোপথোরা, ক্লেরোশিয়াম ও অন্যান্য মাটিবাহিত ছত্রাকের আক্রমনে হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার: মাটি সব সময় স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে, ক্রমাগত মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করলে এবং বায়ু চলাচলে বিঘœ ঘটলে এ রোগের আক্রমনের আশংকা বেশী থাকে।
রোগের লক্ষন: এই রোগটি ছত্রাকের আক্রমনে বীজতলায় হয়ে থাকে। ইহা একটি মারাত্মক রোগ। বীজে আক্রমন হলে বীজ পঁচে যায়। বীজ অংকুরোদগমের পরেই প্রাথমিক পর্যায়ে চারা মারা যায় একে প্রি-এমারজেন্স ড্যাম্পিং অফ বলে। পোষ্ট-এমারজেন্স ড্যাম্পিং অফ-এর বেলায় চারার হাইপোকোটাইলের কর্টিক্যাল কোষ দ্রুত কুচকে যায় ও কালো হয়ে যায়। চারার কান্ড মাটির কাছাকাছি পঁচে চিকন হয়ে যায়। কান্ডের গায়ে ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়। চারার গোড়া চিকন, লিকলিকে হয়ে ঢলে পড়ে ও মারা যায়।
প্রতিকার :
১) সুনিষ্কাশিত উচু বীজতলা তৈরী করতে হবে যেখানে সূর্য্যালোক ও বায়ু চলাচল পর্যাপ্ত থাকে।
২) রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
৩) বীজ বপনের ২ সপ্তাহ পূর্বে ফরমালডিহাইড দ্বারা বীজতলা শোধন করতে হবে।
৪) বায়োফানজিসাইড- ট্রাইগোডারমা দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
৫) অর্ধ কাঁচা মুরগীর বিষ্ঠা বীজ বপনের ৩ সপ্তাহ আগে ৩-৪ টন/হেঃ হিসেবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
৬) কাঠের গুড়া বীজতলার উপর ৩ ইঞ্চি বা ৬ সেমিঃ উচু করে ছিটিয়ে দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
৭) বীজতলা রৌদ্রপুর্ন দিনে সূর্য কিরণে স্বচ্ছ পলিথিন দ্বারা কমপক্ষে ৩-৪ সপ্তাহ ঢেকে রাখতে হবে ।
৮) প্রোভেক্স-২০০ বা ব্যভিষ্টিন (প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম) দ্বারা শোধন করে বীজ বপন করতে হবে।
৯) বীজ ৫২০ঈ তাপমাত্রায় গরম পানিতে ৩০ মিনিট রেখে শোধন করে নিয়ে বপন করতে হবে।
১০) রোগের আক্রমন দেখা দিলে ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা কিউপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হিসাবে মিশিয়ে চারার গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
কৃপ্র/এম ইসলাম