কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ফলের ভারে নুয়ে পড়া গাছগুলোকে বাঁশের ঠেকা দিয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু প্রতিটি গাছে ঝুলছে পরিপুষ্ট কমলা। কোনোটি সবুজ আবার কোনোটিতে হালকা কমলা রং ধরেছে। ফলের ভারে কোনো কোনো ডাল মাটির দিকে চার থেকে পাঁচ ফুট নেমে এসেছে। গত ২৪ নভেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচর সদর ইউনিয়নের সাবেক্ষং নব কারবারিপাড়া গ্রামের মধুসূদন তালুকদারের কমলাবাগানে এমন গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে। ছয় একর আয়তনের মধুসূদনের বাগানে সব মিলিয়ে সাত শ কমলাগাছ রয়েছে। অধিকাংশ গাছেই ফলন এসেছে। বড় আকারের এই কমলা হাতের মুঠোয় আটে না। একেকটি কমলার ওজন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। স্বাদেও বেশ মিষ্টি। খবর প্রথম আলো।
শুধু মধুসূদন তালুকদার নন, সাবেক্ষং এলাকায় তাঁর মতো আরও ২০ জন কমলাচাষি রয়েছেন। এ বছর এই এলাকায় কমলার ফলন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। এই মৌসুমে একেকজন চাষি দুই থেকে ছয় লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। রাঙামাটি জেলায় সাজেকের কমলার খ্যাতি থাকলেও এখন নানিয়ারচরের সাবেক্ষং তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। স্বাদে ও গুণে-মানে কাছাকাছি হওয়ায় সাবেক্ষংয়ের কমলা সাজেকের কমলার মতোই ক্রেতাদের নজর কাড়ছে।
দুর্গম সাবেক্ষং গ্রামে যেতে হলে নানিয়ারচর উপজেলার টিঅ্যান্ডটি এলাকা থেকে অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে এক কিলোমিটার দূরে পাতাছড়ি এলাকায় নামতে হয়। সেখান থেকে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এক থেকে দেড় ঘণ্টা হেঁটে গেলে সাবেক্ষং নব কারবারিপাড়া। ওই এলাকায় সাবেক্ষং নামের দুটি গ্রাম আছে। একটি ডানে সাবেক্ষং ও অপরটি বামে সাবেক্ষং। নব কারবারিপাড়ার অবস্থান ডানে সাবেক্ষং গ্রামে।
মধুসূদন তালুকদার জানান, ২০০৭ সালে বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেক থেকে কমলাবীজ নিয়ে আসেন। পরবর্তী বছরে ছয় একর জমিতে কমলার আট শ চারা রোপণ করেন। ২০১৪ সাল থেকে বাগানে ফল আসা শুরু হয়। প্রথম বছর তিন লাখ টাকায় ও পরের বছর চার লাখ টাকায় বাগানের ফল বিক্রি করেছেন। এ বছর পুরো বাগান ছয় লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন।
মধুসূদন তালুকদার আরও বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর তিনি আম ও কাঁঠালের বাগান করেছিলেন। তবে যাতায়াতব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় বাগানেই অনেক ফল পচে নষ্ট হয়ে যেত। এ কারণে কম পচনশীল ফল কমলা চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি এখন এলাকার ২০ জন চাষি কমলা চাষ করছেন।
সাবেক্ষং গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে কমলা কিনে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ী জ্যোতি রঞ্জন চাকমা। তিনি জানান, এবার ১২ লাখ টাকায় নানিয়ারচরের সাবেক্ষং গ্রামের তিনটি কমলাবাগান কিনেছেন তিনি। এর মধ্যে মধুসূদনের বাগান কিনেছেন প্রায় ছয় লাখ টাকায়। এ পর্যন্ত মধুসূদনের বাগান থেকে তিনি ২০ হাজার কমলা তুলেছেন। বাগানে আরও ১০ থেকে ১২ হাজার কমলা আছে। প্রতি জোড়া কমলা ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমলা বিক্রি করে তাঁর ভালো লাভ হচ্ছে বলে জানান।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলা এ বছর ১ হাজার ৯৪০ একর জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষং গ্রামের ১০৫ একর জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। সাবেক্ষং এলাকার মাটি কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় কমলার আকার অনেক বড় হয়। এখন ওই এলাকার কমলা রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
সাবেক্ষং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুপন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, নানিয়ারচরে কয়েক বছর ধরে কমলা ফলছে। প্রতিবছর ফলন বেড়েই চলছে। এর মধ্যে সাবেক্ষং গ্রামে বেশি কমলার চাষ হয়। অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সাবেক্ষংয়ের কমলা বড়, রসালো ও মিষ্টি। সরকারি সাহায্য পেলে এখানে কমলার চাষ বাড়বে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রমণী কান্তি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় প্রায় দুই হাজার একর জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নানিয়ারচরের সাবেক্ষং এলাকার কমলা স্বাদে মিষ্টি ও আকারে অনেক বড়। এর আগে বাঘাইছড়ির সাজেক কমলার জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন সাবেক্ষং ধীরে ধীরে তার জয়গা দখল করছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম