কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ভোলা জেলার উপজেলা সদরের কোড়ালিয়া শিম চাষের আদর্শ গ্রাম। এখানকার হাজার হাজার শতাংশ জমিতে খামার পদ্ধতিতে চাষিরা শিম আবাদ করছেন। অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়াতে বর্তমানে অনেকেই শিম চাষে ঝুকছেন। এখানে প্রায় ৩’শত এর বেশি পরিবার এই পেশায় জড়িত। গ্রামীন পথের দুপাশের জমিতে শোভা পায় অগনন শিমের বাগান। তাই অগ্রাহায়নের শেষ দিকে বিস্তীর্ন জমিতে শিমের সবুজ সমারাহে সাদা-বেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। লতায় শিমও আসতে শুরু করেছে থোকায় থোকায়।
চাষিরা জানান, এই গ্রামে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিমের চাষ করা হচ্ছে। প্রথম দিকে ধান আবাদ করলেও বর্তমানে অধিকাংশ চাষি শিম চাষের সাথে জড়িত। গত বছর শিমের ফলন বৃদ্দি ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার যেন চাষিদের উৎসাহের শেষ নেই। সারাদিন খামারে পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। এখানকার প্রায় সব জমিই এখন শিম চাষ হচ্ছে। পরিত্যক্ত, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মাচা তুলে খামরা পদ্ধতিতে চলছে শিম চাষ। এছাড়া এখানে অন্যান্য সময় মৌসুমি সবজির চাষ করা হয়। মূলত সবজি চাষের উপর ভিত্তি করে এই গ্রামের কৃষকরা জিবীকা নির্বাহ করেন।
পশ্চিম কোড়ালিয়া গ্রামের শিম চাষি সৈয়দ আহমেদ হাওলাদার জানান, তিনি প্রায় ২৫ বছর যাবত শিমসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করছেন। এবছর ১ একর জমিতে শিমের খামার করেছেন। এতে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করছেন ৩ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে তার। লাভ থাকবে ২ লাখ টাকারও বেশি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ফুল থেকে শিম আসতে শুরু হয়েছে। পৌষের প্রথম থেকে মাঘের শেষ পর্যন্ত শিমের পরিপূর্ণ মৌসুম থাকবে। বর্তমানে অনেক কৃষকই শিম তুলতে শুরু করেছেন। পোকা মাকরের আক্রমন কম থাকায় এবার শিমের বাম্পার ফলনের সপ্ন দেখছেন এই কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, চলতি শীত মৌসমে জেলায় মোট ৬৮৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। আর সদর উপজেলার ২০০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে কোরালিয়া গ্রামেই ১২০ হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। এই গ্রামে রয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃত্তুঞ্জয় তালুকদার বাসস’কে জানান, জেলায় গত বছরের চেয়ে এবছর শিমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোড়ালিয়া গ্রামে সবসমই শিমের জন্য বিখ্যাত। আমরা চাষিদের বিভিন্ন রোগ-বালাই সম্পর্কে ধারনা ও পরামর্শমুলক সহায়তা দিয়ে থাকি। আর চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাষিরা জানান, শিম চাষের জন্য প্রথমে জমি নির্বাচনের মাধ্যমে বীজ বোপনের জন্য উচু করে মাটি প্রস্তুত করতে হয়। পরিমিত সার ও অন্যান্য উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে সময়মত বীজ রোপন করতে হয়। এছাড়া বাশ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। মাচার উপরে তর তর করে বেড়ে উঠে শিমের লতা। সাধারনত ২/৩ মাসের মধ্যেই লতায় ফুল আসে। বর্তমানে গাছে ফুল থেকে শিম ধরা শুরু হয়েছে। অনেকেই আবার সেই শিম হাটে তুলতে আরম্ভ করেছেন। স্থানীয় ভাষায় ক্ষেতের প্রথম শিম তোলাকে ‘হালভাঙ্গা’ বলে। এসময় রীতিমত উৎসবের সৃষ্টি হয় শিম তোলাকে কেন্দ্র করে।
কৃষক বাবুল মীর বলেন, তিনি ৬৮ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করছেন। বর্তমানে শিমের বাজারদর ভালো রয়েছে। কেজি ৪০ টাকা ও মণ ১৪’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি প্রথম শিম তুলে প্রায় ১৩ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এরকম আরো অন্তত ৬-৭ বার শিম তোলা যাবে। শুধু বাবুল মীর নয়, সুমন কর্দো, হারুন মাইলতা, মানিক মৃধা, কালাম সরদার, মহাসীন, সেলিম ডাক্তার, সিরাজ, ফজলে নুর, ফকরুল মিঝিসহ আরো অনেকে শিম চাষের সাথে জড়িত। ব্যাপারীরা এখান থেকেই ভ্যানে করে শিম কিনে নিয়ে যান আড়ৎ ও বাজারে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় এই গ্রাম থেকে শিম যাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।
এদিকে সরেজমিনে কোড়ালিয়া গ্রামে দেখা যায় অপরূপ দৃশ্য। শুধু শিম আর শিমের খামার। বাড়ির অঙ্গিনা, পুকুর পাড়, রাস্তার পাশ, পরিত্যক্ত জমি, নিচু জমিসহ যেখানেই খালি জায়গা পাওয়া গেছে সেখানেই শিমের ঝাড় তোলা হয়েছে। সাদা-বেগুনি শিমের ফুলে ভ্রমর নাচে গুঞ্জন তুলে। সুবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছে শিমের সারি। চাষিরা একান্ত মনে কাজ করছেন ক্ষেতে। কোথাও কোথাও পুরুশের পাশাপাশি নারীদেরও শিমের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
একই গ্রামের বটতলা এলাকার শিম চাষি হারুন মাইলতা ও নাছির মাইলতা বলেন, শিমের ফলন এবছর ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। গত বছর লাভ হওয়াতে এই বার আরো বেশি জমিতে শিমের আবাদ করেছেন তারা। উৎপাদন খরচ পুশিয়ে লাভবান হবেন এমনটাই আশা তাদের। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তার সার্বিক পরামর্শে অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তারা। এছাড়া হারেজ মিয়া, কবির মাইলতা, মিঠু মাইলতা, সামসুদ্দিন, আবু, কাঞ্চনসহ অনেকেই জানান তাদের শিম চাষের কথা। ভাগ্য বদলের কথা। তাই শীতের সময় পুরো গ্রামই হয়ে উঠে শিম চাষের গ্রাম।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম