কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বরিশালের কীর্তনখোলার শেষ সীমা নলছিটির দপদপিয়া থেকে শুরু সুগন্ধা নদীর পথচলা। এরপর ঝালকাঠির গাবখান মোহনা থেকে শুরু বিষখালী নদীর। ঝালকাঠির ১৭ কিলোমিটার প্রবাহমান সুগন্ধা আর বিষখালীর ৩০ কিলোমিটার মিঠা পানিতে প্রতি বছর প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন সুস্বাদু ইলিশ ধরা পরে। আর এখানকার ইলিশ স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়, তাই এখানকার ইলিশের চাহিদা বেশি বলে জেলেরা জানান। এজন্য সুগন্ধা-বিষখালীর ইলিশ পাইকারদের মাধ্যমে যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে।
ভরা মৌসুমে নদীতে জাল ফেললেই জেলেরা ছোট বড় ইলিশ পেয়ে থাকেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে জাল ফেলার উৎসব চলে মৌসুমজুড়ে। সারা বছর ইলিশ ধরা পড়লেও আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। তবে এ বছর ডিসেম্বরেও প্রচুর ইলিশ জালে আটকা পড়ছে।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীর বড় অংশটি হচ্ছে নলছিটি উপজেলার ভেতরে। ঝালকাঠি গাবখান নদীর মোহনা থেকে শুরু হয় ইলিশ ধরা। শেষ হয় বরিশালের কীর্তনখেলার পশ্চিমাংশে গিয়ে। সুগন্ধ্যার দীর্ঘ এই ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে বেশিরভাগ জেলেই ইলিশ শিকার করেন ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, কলেজ খেয়াঘাট, নলছিটির বারইকরণ, সরই, মাটিভাঙা, বহরমপুর, চরবহরমপুর, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, নলছিটি লঞ্চঘাট, পুরানবাজার, সুজাবাদ, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সারদল, কংসারদীঘি, কুমারখালী ও দপদপিয়া পুরনো ফেরিঘাট এলাকায়।
বিষখালী নদীর জেলার ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে দিয়াকুল, বাদুরতলা, ভবানীপুর, বাদুরতলা, বড়ইয়া, পালট, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া, চল্লিশকাহনিয়া, প্রভৃতি এলাকায় শত শত জেলে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছেন এসব এলাকায়। জেলেদের বেশিরভাগই নদীর দুই তীরের বাসিন্দা। ক্রেতা ও পাইকাররা অনেক সময় তরতাজা ইলিশ কিনতে নদীর তীরে এসে বসে থাকেন। জেলেরা মাছ শিকার করে বাড়ি ফেরার পথে পথেই বিক্রি হয়ে যায় অর্ধেকেরও বেশি। বাকি ইলিশগুলো শহর ও গ্রামের বাজারগুলোতে বিক্রি করা হয়।
নদীতে বর্তমানে ৩০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই-আড়াই কেজিরও ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর একটু বড় ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে। এক কেজির বেশী ওজনের ইলিশের দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। ঝালকাঠি শহরের বারোচলা সংলগ্ন বড় বাজার, চাঁদকাঠি চৌমাথা বাজার, নলছিটি লঞ্চঘাট বাজার, পুরাতন বাজার, কুমারখালী বাজারে বছরের সবসময়ই পাওয়া যায় ইলিশের দেখা। মৌসুমের সময় দাম কম থাকে এসব বাজারে। বাকি সময় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয় ইলিশ।
নলছিটি জেলে পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন জেলে জুধিষ্টি দাস বলেন, আমাদের নদীতে সারা বছরই ইলিশ পাওয়া যায়। সরকারী নিষেধাজ্ঞার সময়টুকু বাদ দিয়ে আমরা দিনরাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরি। মৌসুমে ঝাঁকেঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে জালে। তাজা ইলিশ নদীর তীরে বসেই অনেকে কিনে নিয়ে যান। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। বরিশাল থেকে মাছের আড়তদাররা এসে এখান থেকে ইলিশ কিনে নেন। সেই ইলিশ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্নস্থানে।
চরবহরমপুর এলাকার জেলে আবুল কালাম বলেন, সুগন্ধার ইলিশ খেতে খুবই সুস্বাদু। আমাদের আশপাশের এলাকার মানুষ সারা বছরই সুগন্ধার ইলিশ খাচ্ছেন। ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। মিঠা পানির রূপালি ইলিশ ধরতে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জোয়ারের শুরুতে জাল ফেলি। এসময় মাছগুলো একত্রিত হয়ে ছোটাছুটি করে, তাই সময়মত জাল ফেলতে পারলে প্রতিনৌকায় ১০-১৫ কেজি করে ইলিশ পাওয়া যায়।
মাটিভাঙা এলাকার জেলে রবিউল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে মাছে পানিতে সমান থাকে ইলিশ। একটি জাল ফেলতে সময় লাগে ২০ মিনিট, আর তুলতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। সব মিলিয়ে একঘন্টায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে।
নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেব করে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে টানা ২২দিন নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আমরাও ব্যাপক অভিযান চালিয়েছি । অভিযানের সময় জেলেরা নদীতে নামতে পারেনি। যারা নেমেছে, তাদের আটক করা হয়েছে। তাই এ বছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে। সুগন্ধার-বিষখালীর মিঠা পানির ইলিশ খেতে সুস্বাদু, তাই স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এসে ইলিশ কিনছে জেলেদের কাছ থেকে।
ঝালকাঠি জেলা মৎস কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মল্লিক বলেন, ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা ও বিষখালী নদীর প্রায় ৫০ কি.মি. জলসীমায় প্রতি বছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। গত বছর জেলার সুগন্ধ্যা ও বিষখালী নদী থেকে ৬৫৬ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়। ভরা মৌসুমে যে সব ইলিশ ধরা পরে তার বেশীর ভাগই ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের। এছাড়া ১ কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশও পাওয়া যায়।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম