ড. এবিএম জাহিদ হোসেন: রংপুর অঞ্চলে আউশ ধান উৎপাদন এলাকা অত্যন্ত সীমিত। এ অঞ্চলে আউশকে নাবি বোরো হিসেবে আমন-আলু-নাবি বোরো এই শস্য বিন্যাসে দেখা যায় যা রংপুর অঞ্চলে জনপ্রিয়। ২০১৩-১৪ রবি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে আলু উৎপাদনের এলাকা ছিল প্রায় ১ লাখ ৭১ হেক্টর (ডিএই)। আলু উত্তোলনের পর বেশিরভাগ জমিতে ব্রি ধান২৮ নাবি হিসেবে আবাদ করা হয় যা ব্রাউশ হিসেবে গণ্য করা হয়। কৃষকরা সাধারণত ৫০-৬০ দিনের চারা ব্যবহার করে ফলে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩-৪ টনের বেশি হয় না। ব্রি ধান২৮ তাপ সহনশীল জাত না হওয়ায় ফুল ফোটা পর্যায়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ফলন কমে যায়। ফলে অনেক চিটা পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে বীজতলায় চারা বেশিদিন থাকার কারণে মূল জমিতে রোপণ করার পর কুশি কম হয় এবং ফলনে ব্যাঘাত ঘটে।
বস্তুত এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে ব্রি ধান৪৮ কে ব্রাউশ হিসেবে রংপুর অঞ্চলে আইএপিপি প্রকল্পের আওতায় সেচযোগ্য পরিবেশে ২০১৪-এর আউশ মৌসুম থেকে আবাদ শুরু করা হয়। ব্রি ধান২৮ এবং ব্রি ধান৪৮ জাত দুটির ২৫-৩০ দিনের চারা আলু তোলার পর ১৫-২০ মার্চের মধ্যে রোপণ করা যায় এবং ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে কর্তন করা সম্ভব হয়। এই ১১০-১১৫ দিনের সময়ে স্থানভেদে ৬-৮টি সেচের প্রয়োজন হয়। ব্রি ধান২৮ এবং ব্রি ধান৪৮-এর গড় ফলন ছিল যথাক্রমে ৪.৩৪ এবং ৫.৮১ টন/হেক্টর অর্থাৎ ব্রি ধান৪৮-এর ফলন ব্রি ধান২৮-এর তুলনায় হেক্টরপ্রতি প্রায় ১.৫ টন বেশি ছিল। কাজেই ব্রি ধান২৮ বোরো হিসেবে সঠিক সময়ে রোপণ করলে যে ফলন পাওয়া যায় ব্রাউশ হিসেবে ব্রি ধান৪৮ রোপণ করলে প্রায় একই রকম ফলন পাওয়া যায়।
অধিকন্তু ব্রাউশ হিসেবে ব্রি ধান৪৮ চাষ করলে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের শতকরা ২৮ ভাগ পাওয়া যায় ফলে সেচও লাগে। যেখানে স্বাভাবিক বোরো হিসেবে ব্রি ধান২৮ চাষ করলে মোট মৌসুমী বৃষ্টিপাতের মাত্র ১২.৪ ভাগ পাওয়া যায় এবং ২০-২৫টি সেচের প্রয়োজন হয়। কাজেই ব্রাউশের জীবনকাল অল্প দিন হওয়ায় সেচের পানিও বোরোর তুলনায় প্রায় অর্ধেক লাগে। পানির প্রয়োজনীয়তা তুলনা করলে ১ কেজি ব্রি ধান৪৮ উৎপাদন করতে পানি লাগে ১৫০০ লিটার পক্ষান্তরে ১ কেজি ব্রি ধান২৮ উৎপাদন করতে ২০০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে স্বাভাবিক বোরো হিসেবে যদি ব্রি ধান২৮ চাষ করা যায় তবে ১ কেজি ধান উৎপাদন করতে স্থানভেদে ৩০০০-৪০০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। কাজেই ব্রাউশ হিসেবে ব্রি ধান৪৮ চাষ করে প্রায় অর্ধেক সেচের পানি সাশ্রয় করা সম্ভব। ফলে পরিবর্তিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ব্রাউশ হিসেবে ব্রি ধান৪৮ চাষ করে রংপুর অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যাবে।
লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্রি-গাজীপুর
কৃপ্র/ এম ইসলাম