কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের এক বছর আজ সোমবার। বিগত বছরের এই দিনে (১২ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে আলোচিত এই প্রকল্পের মূল সেতুর কাজ ও নদী শাসনের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপরই পাল্টে যেতে থাকে প্রকল্প এলাকার চিত্র। এইদিন প্রথম পাইল স্থাপন শুরু করে জার্মানী হ্যামার। এখন সেই পদ্মায় ৩৭টি পাইল বসেছে। আর সংযোগ সেতু (ভায়াডাক্ট) পাইল বসেছে ২৯টি।
ইতোমধ্যেই সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের চারটি স্প্যান চীন থেকে দেশে পৌঁছেছে। একটি স্প্যান ফিটিংয়ের পর এখন চলছে লোড টেস্টের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই বিশাল স্প্যান স্থাপনের এসেছে ৩ হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ভ্রাম্যমাণ ক্রেন। ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ৬টি করেই পাইল বসেছে। এখন পিলার দু’টি পরিপূর্ণ করার কাজ চলছে। তাই ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হবে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরের এই এক বছরের কাজের অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্ট। তিনি জানান, পদ্মা নদী বৈচিত্রপূর্ণ, নানা রকম চ্যালেঞ্জ ছিল। সব কিছু মোকাবেলা করেই আশানুরূপ লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বড় বড় প্রকল্পে নানা রকম চ্যালেঞ্জ থাকবে আর তা সমাধান করেই এগিয়ে যেতে হবে। তবে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ সম্ভব করা হবে।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। বাঙালির বড় চ্যালেঞ্জ স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হচ্ছে- এটি আমাদের অহংকার। এখন যে অগ্রগতি হচ্ছে এটি ধারাবাহিক কাজের অংশ। তবে প্রথম কাজটিই করেছে জেলা প্রশাসন। জমি অধিগ্রহণ করে সেতু বাস্তবায়নের ভিত তৈরি করে দিয়েছে। এখনও ট্রেন লাইনের জমি অধিগ্রহণসহ পদ্মা সেতুর কাজগুলো আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজও একই দিন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই কাজেও বেশ অগ্রগতি।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ড্রেজিং, বস্তা ফেলা, ব্লক তৈরি সবই চলছে। প্রতিরক্ষামূলক কাজ ছাড়াও নদী শাসনসহ অন্যান্য কাজের অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৭ লাখ টন পাথর ক্রয় করা হয়েছে। প্রায় ৩৩ লাখ ব্লক তৈরি হয়েছে। এখন নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ২৭ শতাংশ। মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ ছড়িয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর ট্রানজিশন পিলারের কাজও চলছে পুরোদমে। মূল সেতুর শেষ প্রান্তের ৪২ নম্বর পিলারে চলছে পাইল স্থাপনের কাজ। জাজিরা প্রান্তের পদ্মা তীরের এই পাইলটিই মূল সেতু এবং সংযোগ সেতুর বন্ধন তৈরি করবে।
এদিকে সেতুর সুপার স্ট্রাকচারেরও অগ্রগতি রয়েছে। মাওয়ার কুমারভোগের ওয়ার্কসপে ফিটিং হওয়া প্রথম স্প্যানটির (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) লোড টেস্ট চলছে। ছয় ধাপের লোড টেস্টের এখন চার ধাপ চলছে। এই লোড টেস্ট পরিদর্শন করে গেছেন সেতুটির বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বাংলাদেশী পাঁচ বিশেষজ্ঞ।
সাধারণত এই ব্রিজে মালামাল ও যানবাহনসহ ধারণ ক্ষমতা ৮শ’ ৯৬ টন। এই পরিমাণ ওজনের কোন কিছু সেতুর উপর দিয়ে গেলেও ব্রিজের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেব অনুযায়ী এর দেড়গুণ অর্থাৎ ১ হাজার ৩শ’ ৪৪ টন লোড দিয়ে এর পরীক্ষা করা হবে। ছয় ধাপের এই লোড পরীক্ষায় আস্তে আস্তে লোড বাড়ানো হচ্ছে। মাওয়া প্রান্তে
লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে ব্রিজের বিশেষ প্লাটফর্ম, করা হয়েছে পাইল ক্যাপ। এর উপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে সুপার স্ট্রাকচারের স্প্যানটি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, বাঙালির বীরত্বের আরেক ইতিহাস রচনা করছে পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতুর কাজ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের এক বছরের অগ্রগতি না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না- এই অঞ্চলের আর্থ-সমাজিক সবক্ষেত্রে কি যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম