কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বিটি বেগুন চাষের বিরোধিদের উদ্দেশ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেড় বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে বাংলাদেশে এ বেগুনের চাষ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ এই বেগুন খেয়ে মারা গেছে এমন তথ্য কি কেউ দিতে পারবে? সম্প্রতি সংসদে হুইপ শহীদুজ্জামানের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠান একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগায়, তারা এনজিওদেরও টাকা দেয়। এনজিওদের কথা মতো তারা তোতা পাখির মত কথা বলে যায়।
বেগুনের প্রধান শত্রু গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকা দমনে কৃষক ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করে যা ফসলকেও আক্রান্ত করে। এই পরিস্থিতিতে এই পোকা প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা দীর্ঘদিনের। আর যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা মারার জন্য বেগুনের ভেতরের একটি ব্যাকটেরিয়ার জিন ঢুকিয়ে তৈরি করেছেন এ বিটি বেগুন।
২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন দেয়। এরপরই বিভিন্ন সংস্থা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে। একটি বেসরকারি সংস্থা নয়াকৃষি আন্দোলনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদনও করে। পরে অবশ্য তা খারিজ হয়। আর ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিটি বেগুনের চারটি জাত গাজীপুর, পাবনা, রংপুর ও জামালপুর অঞ্চলের ২০ জন কৃষকের হাতে তুলে দেন। এরপর থেকে এর চাষ বাড়ছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলে, যে বেগুন পোকায় খায় না সে বেগুন মানুষ খেলে কী হবে? আমি বলি, অ্যান্টিবায়োটিক তো পোকায় খায় না, তাহলে মানুষ কীভাবে বাঁচে?’।মন্ত্রী বলেন, ‘বলুন কে মারা গেছে বাংলাদেশে বেগুন খেয়ে।’ তিনি বলেন, ‘কেবল পোকা দমনে কেন, ফলন বৃদ্ধিতে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত আবিস্কারগুলো আমরা গ্রহণ করবো।’
ভারতে বিটি বেগুনের চাষ হয় না-হুইপ শহীদুজ্জামানের এমন মন্তব্যের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের বাস্তবতা আর আমাদের বাস্তবতা কী? ভারতে মাইলের পর মাইল জমি এখনও আনইউজড, পড়ে আছে। তাদের এটা না করলেও চলে। আমাদের এইটুকু জমির মধ্যে ১৬ কোটি মানুষ আমরা খাওয়াই।’
মন্ত্রী বলেন, ১০ কেজি বেগুন ফললে পাঁচ কেজিও যদি পোকা খায় বা গাছ যদি অর্ধেক মরে যায় বা গাছ নেতিয়ে পড়ে তাহলে কৃষক কীভাবে খরচটা পোষাবে, কৃষক কীভাবে লাভবান হবে?।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিটি বেগুন আমাদের উদ্ভাবিত না। আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি আমাদের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র-বারীর (এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট) অভিজ্ঞ এবং অনেক জ্ঞানের অধিকারী খুবই উচ্চমানের বিজ্ঞানী বৃন্দ রপ্ত করেছেন। বিটি বেগুনের বীজ নিয়ে কৃষক জিম্মি হয়ে যাবে-এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেন মন্ত্রী। বলেন, বরং এতে মনোপলি হবে না। হাইব্রিডের ক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানি এটা করতে পারে। কিন্তু বায়োট্রেড বা জিন প্রযুক্তির ফলে যে বেগুনটা হবে বা ফলটা হবে বা ফসলটা হবে সেটা কিন্তু ইনগ্রিড। সেটা বীজ থেকে আবার ফসল হবে এবং সেই ফসল থেকে আবার বীজ হবে।’
মন্ত্রী বলেন, হাইব্রিডের বেলায় গাছ হয়, কিন্তু তার ফল হয় না দ্বিতীয়বার। কিন্তু জিএমও বা বায়োট্রেড আবার লাগালে হবে এবং সেই গাছ থেকে ফসল হবে। কাজেই এখানে কৃষককে বড় বড় কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। যারা উন্নত জাতের বিরোধিতা করেন তাদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, আমরা এখন অতিশুদ্ধ, পরিশুদ্ধ, পরিশুদ্ধ টু দ্য পাওয়ার টেন নিয়ে বসে থাকবো না প্রমাণিত, শুদ্ধ বলে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছন, সেটা গ্রহণ করবো?।
এক পর্যায়ে কৃষিমন্ত্রী বিটি তুলার উদাহরণ দেন। বলেন, তিনি ব্ইলেন , তুলার বীজ থেকে এখন ভোজ্যতল উৎপাদন হয়। আর এই তেল এতো দামী যে সাধারণ মানুষ কিনতেও পারে না। উঁচুতলার মানুষই এই তেল খায়। তারা কি বিটি তুলার তেল খেয়ে মারা যাচ্ছে?
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিটি তুলা বীজের তেলে মানুষ মরে না, সয়াবিনে মরে না, বেগুন খেলে মানুষ মারা যাবে?। মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিডি কটনে তুলার উৎপাদন দুই তিন গুণ বেড়ে গেছে। যদি আমরা আগেকার তুলা উৎপাদনের প্রযুক্তিতে থাকতাম তাহলে সারা পৃথিবীতে কেবল বড়লোকরাই কাপড় করতে পারতো। বাকিরা ছাল বাকল পড়ে গায়ে নিয়ে থাকতো থাকতো বা নাইলনের কাপড় পড়তে হতো। এই অবস্থায় বিজ্ঞানের যে আবিষ্কার, সেটাকে সাবধনতার সঙ্গে আমরা গ্রহণ করবো।
কৃপ্র/ এম ইসলাম