কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চলতি বছর বাংলাদেশর চা বাগানগুলোতে বাম্পার চা উৎপাদন হয়েছে। প্রায় ১৫ মিলিয়ন কেজি অতিরিক্ত চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক চা উৎপাদন হলেও মারাত্মক দরপতনের কারণে চা বিক্রি করতে পারছে না চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই অবিক্রিত চা পাতা পড়ে রয়েছে। আর এতে চা শিল্প লোকসানের মধ্যে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
হবিগঞ্জের ২৪টি, মৌলভীবাজারে ৯২টি, সিলেটে ২০টি, চট্টগ্রামে ২২টি, রাঙ্গামাটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১টি করে চা বাগান রয়েছে। গত বছর দেশে ৬৭.৩৮ মিলিয়ন চা পাতা উৎপাদন হয়। এ বছর প্রকৃতি চা শিল্পের অনুকূলে থাকায় ১৬০ বছরের ইতিহাসে দেশে ৮৫ মিলিয়ন চা উৎপাদন হয়েছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীন বাজারে চায়ের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন। অতিরিক্ত প্রায় ১৫ মিলিয়ন কেজি চা পাতা বিদেশে রপ্তানী হওয়ার কথা।
আগে রাশিয়া, আফগানিস্থান, বৃটেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে চা রপ্তানী করা হতো। কিন্তু গত জুন মাসে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে ১০ মিলিয়ন চা আদমানি করায় চায়ের দরপতনের কারণ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এশিয়ার বৃহত্তম হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম জানান, চা বিক্রির মৌসুমের শুরুতেই চট্টগ্রামে চা নিলাম কেন্দ্রে ভাল দামে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি চা নিলামে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। এতে চা বাগান কর্তৃপক্ষ বেশি উৎপাদন হওয়ায় বেশি মুনাফার আশা করছিল। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে শুরু হয় চায়ের বাজারের মারাত্মক দরপতন। ২৭০ টাকা থেকে নেমে তা এখন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এতে বাগান কর্তৃপক্ষের উৎপাদন খরচই উঠে আসছে না। এ নিয়ে চা শিল্প মালিক শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের চা শিল্পের চরম সংকট নেমে আসবে।
বৈকুণ্ঠপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ শাহজাহান বলেন, চায়ের বাজারে এমন দরপতন হওয়ায় ছোট চা বাগানগুলো চালানো এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। উৎপাদন খরচ না উঠায় বাগানের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক এমদাদুর রহমার মিঠু বলেন, এ বছর প্রকৃতি চা চাষাবাদের জন্য অনুকূলে থাকায় সবকটি চা বাগান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চা উৎপাদন করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে দরপতনের কারণে চা বাগানগুলো লোকসানের মধ্যে পড়ার আশংকা রয়েছে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, চায়ের দর এমন হলে চা শিল্প বন্ধ হয়ে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ চা শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তাই সরকারি হস্তক্ষেপে বিদেশে চা রপ্তানি এবং বিদেশ থেকে আমাদনি বন্ধ করতে হবে। এ পদক্ষেপ নিলে চা শিল্প চাঙ্গা হবে পাশাপাশি সরকারও চা রপ্তানি করে মোটা অংকের রাজস্ব পাবে।
সুত্রঃ যুগান্তর / কৃপ্র/এম ইসলাম