কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের পাশে নাটোরের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম নিয়ে ঔষধী গ্রাম। রাস্তার দু‘ধারে দেখা যায় ঔষধী গাছের সমারোহ। প্রায় ৪০ বছর আগে কবিরাজ আফাজ পাগলা (পুরো নাম মো. আফাজ উদ্দিন) কবিরাজি চিকিৎসার জন্য একান্ত নিজের প্রয়োজনে নিজ বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশে ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেছিলেন। তার দেখাদেখি ও উৎসাহে গ্রামের অন্যরাও ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেন। একসময় অনেকেই এ চাষে জড়িয়ে যান। আস্তে আস্তে এ গ্রামের নাম হয়ে যায় ঔষধি গ্রাম।
ঔষধি গ্রামের ভেষজ চাষিদের একত্র করে এ গ্রামে গড়ে উঠেছে লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রাম সমবায় সমিতি লিমিটেড। এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবিরাজ মো. আফাজ উদ্দিন পাগলা। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনে বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০ জন। বর্তমানে এসব গ্রামের কৃষকেরা অধিকাংশ কৃষিজমি ও বাড়ির আঙ্গিনার আশেপাশে প্রায় ঔষধীজাত গাছ গাছড়ার চাষাবাদ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করে থাকে।
ঔষধি গ্রামে রয়েছে ৩০০ প্রজাতির ঔষধি গাছ। যার মধ্যে অন্যতম স্বর্ণলতা, উলটকম্বল, ঘৃতকুমারী, শতমূল, মিছরিদানা, তুলসী, থানকুচি, জার্মানিলতা, হরীতকী, বহেরা, আমলকী, চিরতা, তালমাখনা, তেলাকুচি, বাসক, অশ্বগন্ধা, লজ্জাবতী সাদা-লাল, হস্তিগন্ধা, তেজবল, দুধরাজ, নাগেশ্বর, আমরুল, ঘোড়াচাণ্ডাল, কালো ধুতরা, ঘিয়া বাবলা, লতা কস্তুরী, আলকুচি, অপরিচিতা, পাথরকুচি, ভুঁইকুমরোসহ নানা জাতের গাছ। খোলাবাড়িয়া, খামারপাড়া, আমিরগঞ্জ, হিসুলী, কাঁঠালবাড়িয়া, এতিম মোড়, চৌরী, দক্ষিণপুর, মোল্লার মোড়, বড়বড়িয়া, ইব্রাহীমপুরের প্রায় এক হাজার চাষি ঔষধি গাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল।
সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসব গাছ কিনে নেয়। এলাকার কেউ কেউ আবার ফেরি করে বিক্রি করে। আমিরগঞ্জ বাজারে ঔষধি গাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি শুরু হয়েছে। গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকান। সেখানে ঔষধি গাছ থেকে গুঁড়া তৈরি করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলো পাঠানোও হয়। চাষিরাও লাভের মুখ দেখছে। তারা এসব গাছের চাষ করছে কয়েক দশক।
আফাজ উদ্দিনের বয়স অনেক। তার পরও থেমে নেই ঔষধি চাষের উদ্দীপনা। বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের বিনা মূল্যে গাছের চারা দিয়ে বেড়ান তিনি। পুরো নাটোর একদিন ঔষধি জেলা হিসেবে পরিচিত হবে—এই তাঁর স্বপ্ন। পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি ২০০৯ সালে ‘চ্যানেল আই কৃষি পদক’।
কৃপ্র/ এম ইসলাম