কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ‘প্রাকৃতিক বনসাই’ আর ‘মরুর গোলাপ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া অ্যাডেনিয়ামের সঙ্গে পরিচয় ঘটলে এর প্রেমে না পড়ে আপনার উপায় নেই। এমন মন্তব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা, অ্যাডেনিয়াম-প্রেমিক শাহীন সালেহ্উদ্দীনের। তাঁর হাত ধরেই কয়েক বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারে আগমন ঘটেছে অ্যাডেনিয়ামের। এর ব্যাপক পরিচিতি না থাকলেও একদিকে মনোরম ফুল, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বনসাই—এমন সমন্বয়ের কারণে ক্রমেই অ্যাডেনিয়াম-প্রেমিকের সংখ্যা বাড়ছে।
শাহীন সালেহ্উদ্দীন জানান, অ্যাডেনিয়ামের আদি মাতৃভূমি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মরুভূমি। এপোচাইনেসি পরিবারভুক্ত গাছটি বাংলাদেশে সাধারণত শীতের পর থেকে শীতের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অবিরাম ফুল দিয়ে থাকে। ফুলের রং সাধারণত গোলাপি থেকে লাল ও সাদা বর্ণের।অ্যাডেনিয়ামগাছটি খুবই খরা-সহনশীল। এটি কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখায় প্রচুর পরিমাণ পানি ধারণ করে রাখতে পারে, যা খুব অল্প বৃষ্টিপাত ও খরার সময় ব্যবহার করে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে। এর বৈশিষ্ট্য ও এর বাহ্যিক গঠনপ্রকৃতি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং প্রাকৃতিকভাবেই এটি বনসাই প্রকৃতির বলে খরাপ্রবণ এলাকায় টবে চাষ করার জন্য খুবই উপযুক্ত একটি গাছ। সাত-আট দিন পর টবে অল্প কিছু পানি দেওয়া ছাড়া আর তেমন পরিচর্যা লাগে না। একটি গাছ বাঁচতে পারে ৫০-৬০ বছর থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে শাহীন সালেহ্উদ্দীন বলেন, আপনার লাগানো একটি অ্যাডেনিয়াম স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে দু-এক প্রজন্মের কাছে। কলকাতার ফুলবিজ্ঞানী সুবিল চন্দ্র দে তাঁর ফুলের চাষ বইয়ে এ ফুলের নাম দিয়েছেন ‘কিন্নরী’। তিনি বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ফুলটি সমতল বাংলায় যেকোনো মাটিতে সহজেই চাষ করা যায়। এটি টবে চাষের জন্য উপযুক্ত।
শাহীন সালেহ্উদ্দীন বলেন, ‘এ উদ্ভিদটি সাধারণত আমরা মরুভূমির গোলাপ বলে জানি, যা Adenium obesum, কিন্তু পুরো ল্যাটিন নাম Adenium obesum var obesum। পুরোনো তথ্যে এই মরুভূমির গোলাপটি Adenium arabicum নামে পরিচিত। অ্যাডেনিয়াম নামটি আরবিতে ওডাইন, যার অর্থ অ্যাডেন অর্থাৎ ইয়েমেনের পূর্ব নাম।
অ্যাডেনিয়ামের আদি মাতৃভূমি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার মরুভূমি, সুদান, কেনিয়া, সেনেগালের পশ্চিমাঞ্চল, ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত। এ ছাড়া উদ্ভিদটি প্রাকৃতিকভাবেই শ্রীলঙ্কাতেও আছে। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হচ্ছে থাইল্যান্ডে—এ ফুলের কদর ও সৌন্দর্যের কারণে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইন, জাপান থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও কানাডাতেও এর চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর চাষ শুরু হয়েছে, তবে সব জায়গায় নয়। রাজশাহী শহরে ও হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছড়িয়েছে।
প্রতিবেদন প্রথম আলো / কৃপ্র/এম ইসলাম