কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ অব্যাহতভাবে কমতে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে সেচনির্ভর বোরো আবাদে কমান্ড এলাকার কৃষকরা দেখা দিয়েছে।প্রয়োজনীয় পানির অভাবে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড আসন্ন বোরো মৌসুমে মাত্র আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এলাকা ঘুরে কৃষক ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি প্রতিদিন কমছে। খবর জনকণ্ঠ অনলাইনের।
ফলে নদীর উজান ও ভাটি এলাকায় বালুচর পড়েছে। সরু নালার আকার ধারণ করেছে তিস্তার স্রোতধারা। এক সপ্তাহ আগে ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৪ হাজার কিউসেক। এখন সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ১২শ’ কিউসেকে। তাও প্রতিদিন পানি প্রবাহ কমছেই। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় নদীর উজানের প্রবাহ ঐতিহাসিক গড় প্রবাহের (১৯৭৩-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত) তুলনায় গতবারের মতো এবারও ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। সূত্র মতে ২০০১ হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছিল। ওই সময় এই সেচের পানি পেতো নীলফামারী, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দর পর্যন্ত। কিন্তু ২০১১ সালের পর হতে শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি প্রবাহ এতটাই নেমে আসে যে, সে সময় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।
সূত্র বলছে, উজান হতে নদীর পানির প্রাপ্ততা না পাওয়া যাওয়ায় গত বছর (২০১৫) বোরো মৌসুমে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এবং সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর পর্যন্ত সেচ দেয়া সম্ভব হয়েছিল। সূত্র মতে, তিস্তা চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ও নদী রক্ষার লক্ষ্যে ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ পানি ছাড়তে দিল্লীকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে ঢাকা।
পানি উন্নয়ন বোডের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান চলতি মৌসুমে ১ জানুয়ারি হতে বোরো মৌসুমের জন্য কৃষকদের সেচ প্রদান কার্যক্রম শুরুর সম্ভাব্য দিন ধার্য করে এবারও আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেচ দেয়ার স্থানগুলো ধরা হয়েছে নীলফামারী সদরে আটশ’ হেক্টর, ডিমলা উপজেলার ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ২০০ হেক্টর। তবে উজানের পানি বেশি পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে সেচ প্রদানে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। ডিমলা উপজেলার নাউতরা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামে তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের পাশের কৃষক সাইদুর রহমান অভিযোগ করেন, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্প আগের মতো পানি দিতে পারে না। ফলে নিজস্ব সেচযন্ত্র দিয়ে এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার এক লাখ ১১ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের জুনে এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ১৯৭৯ সালে এবং ক্যানেল সিস্টেমের নির্মাণকাজ ১৯৮৪-৮৫ সালে শুরু হয়। কিন্তু শুরুর দিকে ৭৯ হাজার হেক্টরে সেচ দেয়া গেলেও পানির অভাবে প্রতি বছর সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমতে থাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রথম তিন মাসে গড়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৯০০ কিউসেক, ২০১৩ সালের প্রথম তিন মাসে গড়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার থেকে সর্বনিম্ন দেড় হাজার, ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০০ থেকে সর্বনিম্ন ৫৫০ কিউসেক, ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ এক হাজার ২শ’ থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া গেছে। ২০১৬ চলতি ডিসেম্বরে এখন ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মঙ্গলবার পর্যন্ত পানি প্রবাহ এক হাজার ২০০ কিউসেক ছিল। তবে প্রতিদিন উজানের পানি কমছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, উজান থেকে তিস্তার পানি আসা কমে যাওয়ায় বোড মিটিং এ চলতি বোরো মৌসুমে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম