কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জামালপুর জালার নান্দিনায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তৃর্ণ বালু চরে বেড়ে উঠছে শীতের সবজি। ফসলের পরিচর্যা নিয়ে চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর, রানাগাছা ও শরিফপুর ইউনিয়নের চারিদিকে আবাদ করা হয়েছে নানা জাতের সবজি।
সবজির ভান্ডার বলে খ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদের রায়েরচর, মোল্লাপারা, নামাগজারিয়া, টানগজারিয়া, চরযথার্থপুর, উজানপাড়া, ভাটিপাড়া, রাঙ্গামাটিয়া, রেহাইগজারিয়া, মধ্যরচর, আলগীরচর, চরপাড়া, নামারচর, কান্দারচর, বার“য়ামারি, সুতিনদী এলাকা, তুলশীরচর, চরবাছুরআলগা, মানিকেরচর, বাকচর, হনুমানেরচর, বড়ডৌয়াতলা, ছোটডৌয়াতলা, সাহেবেরচর, টেবিরচর, চরখারচর, গারামারা, টিকরাকান্দি, চরগোবিন্দবাড়ী, বীরগোবিন্দবাড়ী, খড়খড়িয়ার উত্তরাংশ, লোন্দহচর, শরিফপুর, হামিদপুর বানারএলাকা, জয়রামপুর, শরিফপুর, বগালির উত্তরাংশ, নর“ন্দি ছাতিয়ানতলা, তারাগঞ্জ, কোচনধরা, মিরাপুর গ্রামে শীতের সবজি আবাদ হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো, শিম, করলা, লাউ, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঢেঁরশ, পটল, ডাটা, মূলা, লাল শাক, পাট শাক, বরবটি, পুঁইশাক, ডাটা শাক রয়েছে।
কৃষক মোবারক আলী, রেজাউল, সোহাগ মিয়া, শেখ আলী, হালিম, ছোরহাব, মোশারফ, গোলাম মোস্তফা, দারোগ আলী, আতাব আলীর সাথে আলাপ হলে তারা জানান, গত দুইযুগ ধরে চরের তপ্ত বালু মাটিতে আমরা নানাজাতের সবজি আবাদ করছি। তারা আরও জানান, প্রতি বছর সাধারণত আগষ্ট ও সেপ্টেম্বরে সবজি আবাদ শুর“ করেন। অক্টোবরে চরের প্রতিটি পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন কৃষকরা।
কথা হয় কৃষক সামছুল হকের সাথে। তিনি বলেন, আমি গত প্রায় ১৮-১৯ বছর ধরে শীতের সবজি আবাদ করছি। এবার আমি দুইবিঘা জমিতে টমেটো ও দেড়বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছি। চারা রোপন, পরিচর্যা থেকে শুরু করে ক্ষেতের টমেটো উঠানো পর্যন্ত একেকজন চাষির মোট খরচ হয় প্রতি বিঘায় ৩০থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে ওই খরচ উঠানোর পরেও প্রায় ৪০থেকে ৪৫হাজার টাকা লাভ হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
সাধারণত প্রতি বছর পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুর“দমে ক্ষেতের টমেটো বেগুনসহ নানা সবজি বাজারে বিক্রি শুর“ হয়। তখন রাজধানী ঢাকা,চট্টগ্রাম,কুমিল্লা, ময়মনসিংহ,নেত্রকোনা,সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা নান্দিনা বাজার, শরিফপুর, কালিবাড়ী, নর“ন্দি, তারাগঞ্জ, বার“য়ামারী, গজারিয়া বাজারসহ গ্রামের ভিতর ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়েন। প্রায় তিন মাস প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকসহ অসংখ্য পিকআপ ভ্যান, ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে সবজি রপ্তানি হয়। গত কয়েক বছর ধরে প্যাকেটজাত হয়ে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে টমেটো রপ্তানি হচ্ছে।
তবে সবজিচাষি গোলাম মোস্তফা, দারোগ আলীসহ অনেকেই দু:খের সাথে জানান, ল²ীরচর-নান্দিনা নদের উপর ব্রিজ না থাকায় সবজিসহ উৎপাদিত সকল পণ্যই নৌকায় পারাপার করতে হয়। এতে ভোগান্তিসহ কৃষকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবার জমিতে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সার, বিষ, কীটনাশকের কোন সংকট নেই। তাছাড়া জামালপুর সদরের বিভিন্ন চরে এবার যে পরিমান টমেটো, বেগুনসহ অন্যান্য সবজির আবাদ হয়েছে তাতে আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলন ও দাম দুইটোই ভালো পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ওই জেলা কৃষি কর্মকর্তা।
সুত্রঃ ৭১নিউজ টিভি/ কৃপ্র/ এম ইসলাম