কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বগুড়া জেলার কৃষকদের একই জমিতে একই সময় দুই ফসল উৎপাদন আগ্রহ বেড়েছে । মূল ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল চাষে সফলতা পাওয়ায় এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন বাড়ছে বগুড়ার শাজাহানপুরের কৃষকদের।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বছরে আদার চাহিদা ২ লাখ ১৯ হাজার টন। এর মধ্যে দেশে উত্পাদন হয় ১ লাখ ৯ হাজার টন আদা। চাহিদার বাকি আদা আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। তাই কৃষি বিভাগ আদা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আদা চাষের সঙ্গে একই জমিতে নিয়ম করে পেঁপে চাষ করে সফলতা আসায় এ পদ্ধতিতে ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন জেলার কৃষকরা।
জানা গেছে, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়নের মাঝিড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ ও সুজন মিয়া ১৫ বিঘার কিছু বেশি জমিতে পেঁপে চাষ করেন। পেঁপের সাথি ফসল হিসেবে চাষ করেন স্থানীয় বারী-১ জাতের আদা। আদার ফলন পাওয়ার আগেই একাধিকবার পাওয়া যাবে পেঁপের ফলন। ১৫ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষে ব্যয় হতে পারে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। আর একই পরিমাণ জমিতে আদা চাষে খরচ হবে ২০-২১ লাখ টাকা। বছর শেষে এই জমি থেকে পেঁপে ও আদা বিক্রি হবে প্রায় ৪০ লাখ টাকার। আগে বছরজুড়ে আদা চাষের পর বিক্রি হতো ৩২-৩৩ লাখ টাকা আর বাড়তি ফলন হিসেবে পেঁপে বিক্রি হবে ৭-৮ লাখ টাকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মসলা গবেষণা কেন্দ্রের কারিগরি সহযোগিতায় আদা চাষে কৃষক রউফ ও সুজন সফলতা পেয়েছেন। এখন তাদের দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও কৃষি অফিসের সঙ্গে ফসল চাষের কৌশল সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করছেন।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শাজাহানপুর উপজেলায় বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মসলাজাতীয় ফলস চাষ হয়। এ বছর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে পেঁপে ও ১০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। উপজেলার অনেক কৃষক আদা চাষ করে সফল হয়েছেন। এরই মধ্যে জমি থেকে আদা উত্তোলন করা হয়েছে। বগুড়ার শাজাহানপুরের আদা চাষী মাঝিড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রউফ বলেন, প্রথমে লোকসান হবে ভেবে ততটা আগ্রহ দেখাইনি। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ ও মসলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা যখন হাতে-কলমে চাষের পদ্ধতি শেখালেন, তখন আগ্রহ বেড়ে গেল। এ পর্যন্ত জমিতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করছি, ৪০-৪৫ লাখ টাকার পেঁপে ও আদা বিক্রি করা যাবে।
তিনি বলেন, আদা চাষের মাঝে পেঁপে গাছ লাগানো হয়েছে। পেঁপে চাষে যত খরচ হয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ আয় হয়েছে। এখন কিছুদিনের মধ্যে আদা উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করা হবে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মো. শামছুদ্দিন ফিরোজ জানান, উপজেলায় চাষীদের সাথি ফসল চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। অনেকেই আবার মাঠ থেকে জেনে অফিসে আসছেন সাথি ফসল চাষের পদ্ধতি জানতে। তিনি বলেন, আব্দুর রউফ ও সুজন মিয়ার দেখাদেখি অনেক চাষীই এখন আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন এ পদ্ধতিতে ফসল চাষে। সাথি ফসলের লাভ বেশি। এছাড়া কৃষকরা একই সময়ে একই জমি থেকে দুটি ফসল পাচ্ছেন। তাই জমিতে আলাদা করে সার বা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
বগুড়ার শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, সাথি ফসল চাষ লাভজনক চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কৃষকরা একই সময়ে একই জমি থেকে দুটি ফসল পেয়ে থাকেন। তবে সব ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল চাষ করা যায় না। কিছু ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। বেগুনের ক্ষেতে মরিচ বা শাক চাষ করা যায়। পটলের ক্ষেতেও আবার হাইব্রিড বা উন্নত জাতের মরিচ, পেঁপে চাষ করা যায়।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম