কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শিউলি ফুল নিক্টান্থেস প্রজাতির একটি জনপ্রিয় ফুল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল, ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকাজুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। এটি শেফালি নামেও পরিচিত। শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয় এবং ১০ মিটারের মতো লম্বা হয়। গাছের পাতাগুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে।
সুগন্ধি জাতীয় এই ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃতি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মতো বৃন্ত। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামি হৃদপি-াকৃতির। ফলের ব্যাস দুই সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে। শরৎ ও হেমন্তকালের শিশিরভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে। পারিজাত শিউলির আরেকটি বিশেষ নাম। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে অনেকবার এসেছে শিউলি ফুল বা পারিজাতের কথা।
প্রাচীনকালে এ ফুলের বোঁটার রং পায়েস ও বিভিন্ন মিষ্টান্নে ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া শিউলির মালা খোঁপার সৌন্দর্য বাড়াতেও অনন্য। ঔষধি হিসেবে ব্যবহার হয় শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল। এই ফুল বোঁটা শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার বানিয়ে হালকা গরম পানিতে মেশালে চমৎকার রং হয়।
বিখ্যাত অমরকোষ গ্রন্থের রচয়িতা অমর সিংহ শিউলিকে বণৌষধি হিসাবে নথিভূক্ত করেছেন। আর্য়বেদিক শাস্ত্রে শিউলির থেকে শিউলির পাতার ভেষজ গুন বেশি করে উল্লেখ্য করা আছে। ভারতীয় বনৌষধি নামক গ্রন্থে উল্লেখ্য আছে বাতরোগে শিউলি পাতার রস খুব উপকারী। এই গ্রন্থে শিউলিকে ভেষজ জগতেও চানক্য হিসাবে অভিহিত করে বলা হয়েছে যে শত ভীমরুলের হাত থেকে চন্দ্রগুপ্তকে রক্ষা করছিলেন চানক্য।
আর মানূষের সায়েটিকা বাতে যখন ভীমরুলের হুল ফোটানর মত যন্ত্রনা আসে তাকে দমন করতে পারে শিউলি। সায়েটিকা বাতে ৮/১০ টি শিউলির পাতা ভালভাবে থোক করে ৪/৫ কাপ পানিতে সেদ্ব করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছাকতে হবে। এরপর সকাল বিকাল দুবেলা কয়েকদিন করে খাওয়ালে যন্ত্রনার উপশম হবে। নিয়ম অনুযায়ি এই রস খেলে অনেক উপকার হয়
মেদ রোগঃ মেদ কমাতে বৈদ্যরা শিঊলি ডালের চুর্ন দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে বিকালে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ব্যাবস্থা অবলম্বনে কিছু দিনের মধ্যে মেদের হ্রাস লক্ষ্য করা যায়।
কৃমিঃ শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল দুবেলা গরম পানি দিয়ে খাওয়ালে কেচোর মত কৃমি পরে যায়।গুড়া কৃমির উপদ্রব ও কমে যায়।
গলা বসাঃ গলা বসার ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস বেশ উপকারী। শ্লেশ্মার দোষে অনেকের গলার আওয়াজ বসে যায়।, এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়ার নিশ্চয়তা।
জ্বালাঃ কেউ কেউ দিনের কোন কোন সময় শরীরে জ্বালা অনুভব করেন এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন খাবার প্রয়োজন হলে চালের চূর্নর সাথে ১ গ্রাম মাত্রায় দুবেলা খাওয়া ভাল।
মূর্ছা রোগঃ মূর্ছা রোগে শিউলি পাতার রস ২ চামচ মাত্রায় অল্প গরম করে দুবেলা খেতে হবে। তবে মূর্ছা রোগের শুরুর দিকে খাওয়ালে ভাল ফল দেয়।
খাদ্যে বিষ ক্রিয়াঃ খাদ্যে বিষক্রিয়ার দরুন রোগী অত্যাধিক বমি করে রোগী দুর্ব্ল হয়ে পরলে, অল্প গরম জলে শিউলির রস ২ বেলা খেলে দূর্ব লতা কেটে যায়।
মহাকবি কালিদাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং বিভূতিভূষণসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক শিউলি ফুল নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন : শিউলি ফুল, শিউলি ফুল, কেমন ভুল, এমন ভুল/ রাতের বায় কোন মায়ায় আনিল হায় বনছায়ায়/ ভোরবেলায় বারে বারেই ফিরিবারে হলি ব্যাকুল।
সুত্রঃ কৃপ্র/ এম ইসলাম