কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাকেশ শুক্লা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু তার জীবনের একটি পরম লক্ষ্য হচ্ছে পথের কুকুরদের পথ থেকে তুলে নেয়া।যে মমতা তারা পায় না, যে কুকুরদের কেউ চায় না, সেইসব কুকুরদের পরম যত্নে ঘরে তুলে নেয়াই তার নেশা। ব্যাঙ্গালোর শহরের বাইরে তার রয়েছে সাড়ে তিন একরের এক ফার্ম হাউস।
সেই ফার্ম হাউসে এখন বসবাস করছে ৭৩৫টি কুকুর। কি নেই সেই আশ্রয়কেন্দ্রে! ল্যাব্রাডর থেকে গোল্ডেন রিট্রিভার, গ্রেট ডেন, বিগেল, ডাচহাউন্ড, রটওয়েলার তো আছেই। আরো আছে শত শত দেশী নেড়ি কুকুর। রাকেশ শুক্লার আশ্রয়ে থাকা বেশির ভাগ কুকুরই পথ ভোলা। হয় তারা নিজেরাই ভুলেছে। নয়তো তাদের কথা ভুলে গিয়েছে তাদের মালিক। সর্বশেষ এই আশ্রয় শিবিরে এসেছে ২২টি ভাল জাতের কুকুর। তাদের মালিক ছিল এক ব্যবসায়ী। সম্প্রতি অপরাধীদের গুলিতে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। “এসব কুকুরের জন্য আমিই শেষ আশ্রয়। এদের অনেকেই কিন্তু দেখতে আর কিউট নেই। অনেক কুকুর ভুগছে নানা ধরনের অসুখে,” জানালেন রাকেশ।
রাকেশ শুক্লা ১০ বছর আগে ব্যাঙ্গালোরে একটি সফটওয়্যার তৈরির কোম্পানি খোলেন। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার ঘণ্টা কাটান এই আশ্রয়কেন্দ্রে। কুকুরের ব্যাপারে তার উৎসাহ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে যখন কাব্য নামে ৪৫ দিনের এক শিশু গোল্ডেন রিট্রিভার তার ঘরে আসে। “ঘরে ঢুকেই সে এক কোনায় লুকিয়ে পড়লো। আমি তাকে অনেক করে ডাকলাম। সে আমাকে দেখলো। তার চোখ দেখে আমি বুঝতে পারলাম সে ভীত, কিন্তু আমাকে সে বিশ্বাস করতে চায়।” তার পর থেকে রাকেশ শুক্লা আর থামেন নি।
২০১২ সালে তার বাড়ি যখন কুকুরে ভরে গেল তখন তিনি ডডবলপুরের ঐ ফার্ম হাউসটি কেনেন।লক্ষ্য হচ্ছে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও গৃহহীন কুকুরদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়া। দেখাশোনার ১০জন কর্মচারীও রেখেছেন রাকেশ শুক্লা। ফার্ম হাউসটিতে রয়েছে যথেষ্ট খোলা জায়গা।
শুক্লা বলেন, যখনই তিনি কোন বৃদ্ধ, অসুস্থ কিংবা বেওয়ারিশ কুকুরের সন্ধান পান, তাকে তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা দেন। এই আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতিদিন ব্যয় হয় ২০০ কেজি মুর্গি আর ২০০ কেজি ভাত। প্রতিদিনের খরচ ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ রুপি, যার ৯৩% খরচ আসে তার নিজের পকেট থেকে। অতীতে পশু-রক্ষা আন্দোলনকারীদের তরফে থেকে তিনি অনেক প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু রাকেশ শুক্লার এক কথা এদের তিনি ত্যাগ করবেন না। এই অবোধ প্রাণীদের সাথে তার জীবন এখন একই সূত্রে গাঁথা।
প্রতিবেদনঃ বিবিসি বাংলা/ কৃপ্র/এম ইসলাম