কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মাগুর বাংলাদেশের মাছের মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু ও উপাদেয় মাছ। মাগুর সব শ্রেণীর মানুষের কাছে অত্যন্ত লোভনীয়। এছাড়া রোগীর পথ্য তথা পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবেও মাগুরের চাহিদা সর্বজনবিদিত।
বৈশিষ্ট্যঃ অতিরিক্ত শ্বাসনালী থাকায় পানি ছাড়াও বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে মাগুর । তাই মজা ও পচা পুকুর, ছোট ছোট ডোবা ইত্যাদি জলাশয়ে মাগুর মাছের বেঁচে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলে যে প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয়, সে অবস্থায়ও ছোট ছোট গর্ত করে এ মাছ দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। পানি থেকে উত্তোলনের পর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার কারণে জীবন্ত মাগুর মাছ বাজারজাত করা সম্ভব।
চাষ পদ্ধতি
পুকুর তৈরি : পুকুরের আয়তন ১০ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ এবং গভীরতা ৮০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার (৩ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট) হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধিক গভীরতা উৎপাদনের দিক থেকে অসুবিধাজনক। কেননা, মাগুর মাছকে শ্বাস নেয়ার জন্য সব সময় উপরে আসতে হয়। এতে অতিরিক্ত শক্তিক্ষয়ের কারণে মাছের বৃদ্ধি প্রতিক্রিয়ার যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটে।পাড়ের ঊর্ধ্বসীমা অবশ্যই সর্বোচ্চ বন্যার লেভেল থেকে ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) উপরে রাখা আবশ্যক। এতে বৃষ্টির সময় মাছ বুকে হেঁটে বাইরে যেতে পারে না। তদুপরি বাইরে থেকে সাপ-ব্যাঙ ইত্যাদি মৎস্যভুক প্রাণীও পুকুরে প্রবেশের কোনো সুযোগ পাবে না। এছাড়া পুকুরের চারদিকের পাড়ের ওপর ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু নেটের বেড়া দেয়া বাঞ্ছনীয়।
চুন প্রয়োগ : পুকুরের তলদেশ শুকিয়ে হাল্কাভাবে চাষ দিয়ে তলার মাটির পিএইচ পরীক্ষা সাপেক্ষে প্রতি শতাংশে ১ থেকে ১.৫ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের পর পুকুরে ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি) পরিমাণ পানি ঢুকিয়ে সপ্তাহ খানিক ধরে রাখা আবশ্যক।
সার প্রয়োগ জৈব সার প্রয়োগের সাতদিন পর পানির উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বজায় থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশ ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম এমপিও সার ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখা আবশ্যক যে, পানির রঙ বাদামি সবুজ লালচে বাদামি হাল্কা সবুজ লালচে সবুজ অথবা সবুজ থাকাকালীন অজৈব সার (রাসায়নিক) প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই।
পোনা মজুদ : পুকুরে ৫ থেকে ৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যরে সুস্থ-সবল পোনা প্রতি বর্গমিটারে ৫০ থেকে ৮০টি ছাড়া যেতে পারে। মে থেকে জুন মাসে মাগুরের পোনা ছাড়ার যথার্থ সময়।
মাগুরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা : প্রাকৃতিক পরিবেশে মাগুর মূলত জলাশয়ের তলদেশের খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রাকৃতিক এই খাদ্যগুলো হচ্ছে জলাশয়ের তলায় আমিষ জাতীয় পচনশীল দ্রব্যাদি। প্রাণী প্লাঙ্কটন ও কেঁচো জাতীয় ক্ষুদ্রাকার প্রাণী ইত্যাদি।
সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ : অধিক ঘনত্বে চাষের ক্ষেত্রে পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ অপরিহার্য। সহজলভ্য দেশীয় উপকরণ সমন্বয়ে মাগুর মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত করা যায়। এ ক্ষেত্রে চালের কুড়া ৪০ শতাংশ, তৈলবীজের খৈল ৩০ শতাংশ ও শুঁটকি ৩০ শতাংশ একত্রে মিশিয়ে গোলাকার বল তেরি করে মাছকে সরবরাহ করা যেতে পারে। তাছাড়া শামুক ও ঝিনুকের মাংস মাগুরের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। এগুলোও অবাধে খাওয়ানো যায়। পুকুরে মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে দৈনিক খাদ্যের এক-চতুর্থাংশ সকালে এবং বাকি তিন-চতুর্থাংশ সন্ধ্যায় প্রয়োগ করতে হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উপরোক্ত প্রযুক্তি মোতাবেক পুকুরে চাষকৃত দেশি মাগুরের ওজন অনধিক চার থেকে ৫ মাসে ১৭৫ থেকে ২০০ গ্রামে উন্নীত করা সম্ভব।
কৃপ্র/ এম ইসলাম