কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশে অনেক কৃষক বিভিন্ন সবজির বীজ নিজেরাই উৎপাদন করেন। সাধারণত স্থানীয় জাতের সবজিগুলো প্রাধান্য পায়। তাদের উৎপাদিত বীজ মানের দিক থেকে আশানুরূপ নয়। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, শুধু ভালো বীজ ব্যবহার করে যে কোনো ফসলের উৎপাদন ৩০% বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষক কীভাবে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ করতে পারবেন সে সমন্ধে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করা হলো।
ভালো বীজ কী?
ভালো বীজ হচ্ছে মানসম্পন্ন বীজ। এ বীজে নিচের গুণাবলী থাকতে হবে।
বিশুদ্ধ জাত: বীজ বিশুদ্ধতার হার অন্তত ৯৫%; পুষ্ট ও সুস্থ; ভেজী চারা গজানোর ক্ষমতা; অংকুরোদগমের হার অন্তত ৮০%; আকর্ষণীয় চকচকে; ভালোভাবে শুকানো।
ভালো বীজের সুবিধাগুলো কী কী?
• বীজ জমিতে কম লাগে।
• ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়।
• বীজ তাড়াতাড়ি গজায়।
• চারা প্রতিকূল আবহাওয়া সহ্য করতে পারে।
• ফসলের পোকা ও রোগবালাই কম হয়। এতে কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ কমে।
• ফসলের ফলন ও মান বাড়ে।
• কৃষক ফসল বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়।
ভালো বীজ উৎপাদনে কী কী বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে?
আবহাওয়াঃ- সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়া, রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, সহনশীল তাপমাত্রা বীজ উৎপাদনের অনুকূলে।
জমি ও মাটিঃ- সেচের সুবিধাযুক্ত উঁচু জমি, উর্বর দোআঁশ মাটি বীজের জন্য উপযোগী। একই জমিতে/জায়গায়, একই পরিবারভুক্ত ফসল প্রতি বছর চাষ করা উচিত নয়। কারণ এতে রোগ, পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
জমি ও মাটিঃ- সেচের সুবিধাযুক্ত উঁচু জমি, উর্বর দোআঁশ মাটি বীজের জন্য উপযোগী। একই জমিতে।
জাত নির্বাচনঃ- ফসলের যে জাত স্থানীয় পরিবেশে বীজ উৎপাদন করে এবং কৃষকদের কাছে এ বীজের চাহিদা আছে, সে জাত নির্বাচন করা উচিত।
বীজের উৎসঃ- বিশুদ্ধ জাতের ভালো মানের বীজ পরিচিত উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
বাছাইকরণঃ- ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য অপ্রত্যাশিত, রোগাক্রান্ত গাছ ও বিভিন্ন আগাছা বাছাই করতে হবে। ফসলের নিচের তিনটি স্তরে বাছাই প্রয়োজন।
১. গাছের দৈহিক বৃদ্ধি পর্যায়ে।
২. ফুল ফোটার সময়।
৩. পরিপক্ব অবস্থায়।
ফসলের ভালো ব্যবস্থাপনা
ভালো বীজ পেতে হলে ফসল বোনা থেকে শুরু করে বীজ কর্তন পর্যন্ত যত্নবান হতে হবে।
১. বীজ ফসলের জমিতে নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, মাটি আলগাকরণ, পানি সেচ ও সুপারিশকৃত মাত্রায় সার সঠিক সময় ব্যবহারের দিকে বীজ উৎপাদককে খেয়াল রাখতে হবে।
২. সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোকা ও রোগ দমন করে সুস্থ গাছ হতে পুষ্ট বীজ পাওয়া যায়।
বীজ সংগ্রহঃ- ফসল ভেদে বীজ সংগ্রহের পদ্ধতি ভিন্ন হয়। টমেটো, বেগুন, শশা, লাউ, চালকুমড়া ইত্যাদির পাকা ফর সংগ্রহ করতে হবে। মুলা, ফুলকপি ও শিম জাতীয় সবজির ৭৫-৮০% শুকানো পত (শিম) সংগ্রহ করা উচিত। মেঘমুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বীজ সংগ্রহ করলে বীজের মান ভালো থাকে।
বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণঃ- ফল জাতীয় ফসলের বীজ (টমেটো, বেগুন) ফল কেটে বীজ বের করে ২৪-৩৬ ঘণ্টা পানিতে রেখে দিলে গাজন প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে এ বীজ সহজেই মাংসল অংশ থেকে আলাদা হয়ে যায়। লাউ, কুমড়া, করলা ইত্যাদি বীজ সরাসরি হাত দিয়ে আলাদা করা যায়। সংগৃহীত বীজ রোদে শুকিয়ে, কুলা দিয়ে ঝেড়ে আবর্জনা, মাটি ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। অপুষ্ট বীজ ও অন্য ফসলের বীজ বাছাই করা উচিত। বীজে ৮-৯% আর্দ্রতা না আসা পর্যন্ত রৌদে শুকাতে হবে।
বীজ সংরক্ষণঃ- বীজ সংরক্ষণে প্রচলিত নিয়মের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ১. বীজ সংরক্ষণ ঘরে বাতাসের আর্দ্রতা কোনোক্রমেই ১০০-এর উপরে হবে না। ২. বীজ সংরক্ষণের জন্য বায়ু নিরোধ পাত্র যেমন পলিথিন আবৃত ছালা, টিন, কাচের পাত্র মোটা পলিথিন ব্যবহার করা যেতে পারে। সংরক্ষণ সময় বীজের ৬-৯% জলীয় ভাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। সিলিকাজেল/ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড বীজের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা শুকনা কাঠ কয়লা, ছাই বা নিমের পাতার গুঁড়া পাত্রে রাখলে পোকার আক্রমণ হবে না।
কৃপ্র/এম ইসলাম