কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঘাঘট নদ। স্থানীয়দের জীবন ও জীবিকার অন্যতম আশ্রয় ছিল এ নদ। কিন্তু ভাঙন রোধ করতে গিয়ে মূল নদী তিস্তাকে ঘিরে অপরিকল্পিত প্রকল্প ও পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে ঘাঘট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত মাটি ও বালি উত্তোলন। গতিপথ আটকে দেয়ায় এ নদ বর্তমানে স্রোতহীন ও মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে নদ ও এর আশপাশের প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নীলফামারীর জলঢাকা শোলমারি নামক স্থানে তিস্তা নদী থেকে উত্পন্ন হয়ে ঘাঘট নদ গাইবান্ধা জেলার কামারজানি স্থানে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদ রংপুর বিভাগের তিনটি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এক সময় এ নদ এলাকাভেদে ৫ থেকে ৬ মিটার গভীর ছিল। ওই সময়ে এ নদ মাছসহ প্রচুর জলসম্পদে পূর্ণ ছিল। ভাঙন রোধে ১৯৭৮-৭৯ ও ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে উত্পত্তিস্থলের ৭৫ কিলোমিটারের মধ্যে নীলফামারীর আউলিয়াখানায় তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে ঘাঘট নদে সরাসরি পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ অংশে তিস্তায় পানি কমে যাওয়ার পর থেকে ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে ঘাঘট।
বর্ষা মৌসুমে ঘাঘট নদে ১৫ থেকে ১৬ ফুট পানি থাকত। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে এ নদে ১০ ফুট পর্যন্ত পানি ছিল। ৩০ বছর আগেও আশপাশের মানুষ এখানকার পানি পান করত। কিন্তু এখন শুধু বর্ষাকালে সম্পূর্ণ নদে পানি থাকে। এর বিভিন্ন স্থান ছোট খালে পরিণত হয়েছে। পানি না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে নদে জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ করা হয়। স্থানভেদে নদের গভীরতা দুই থেকে আড়াই ফুটে গিয়ে ঠেকেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন জেলার শত শত জেলে পরিবার। নদ থেকে মাছ আহরণ করতে না পেরে তাদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন।
ঘাঘট নদের আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম। নদে জেগে ওঠা চরে বোরো ধানসহ রবিশস্য আবাদ হচ্ছে। কোথাও ড্রেজার দিয়ে নদের মাটি কাটা হচ্ছে। আবার কোথাও চলছে অবাধে বালি উত্তোলন। পাড়ে অবস্থিত কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদের পানিতে মিশছে।
জেলা মত্স্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘাঘট নদের দৈন্যর প্রধান কারণ চারটি। এগুলো হলো- তিস্তায় বাঁধের কারণে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া, এ অঞ্চলে বেলে মাটির আধিক্যের জন্য পানির ধারণক্ষমতা হ্রাস, অতিমাত্রায় মাছ শিকার এবং অবৈধ দখল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় ঘাঘট নদের এ দুদর্শা। এজন্য নদীর ওপর পানির আশপাশের মানুষের ন্যায্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ নদের অববাহিকায় আদি রংপুর গড়ে উঠেছিল।
এ বিষয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবার রহমান বলেন, বাঁধ দিয়ে তিস্তা থেকে ঘাঘটে পানি আসা বন্ধ না করলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিত। এতে আশপাশের জেলাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আশঙ্কা ছিল। তিনি বলেন, তিস্তা নদী থেকে পানি আসা বন্ধ হলেও একটি বিল থেকে ঘাঘটে নিয়মিত পানি আসছে। তবে আগে ঘাঘটের গভীরতা ৫ থেকে ৬ মিটার হলেও বর্তমানে তা দুই থেকে আড়াই মিটারে নেমে এসেছে। তিনি জানান, আগে কখনো ঘাঘট পুনঃখননে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। তবে গত বছর এ নদ পুনঃখননে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম