সাইফুল ইসলাম জুয়েল: অনেক শখের বশে বাগান কিংবা টবে গাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু গাছ লাগানোই শেষ কথা নয়, তারপরে এর যথেষ্ট যত্ন না নিলে আপনার পুরো প্রচেষ্টাটাই বৃথা। কেননা, গাছ লাগানোর পরেও অনেক মুন্সিয়ানার প্রমাণ দিতে হয়। নিয়মিত যত্নেই গাছ হয়ে ওঠে সুন্দর। সহজ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্নভাবে গাছ ভালো রাখার জন্য কড়চার এবারের আয়োজনে রইল কিছু টিপস।
গাছে বেশি কিংবা কম পানি দেওয়া কোনোটাই গাছের জন্য উপকারী নয়। ঠিক যতটুকু গাছ নিতে পারে ততটুকু পানিই দেওয়া উচিত। গাছে পানি দেওয়ার জন্য ভালো সময় সকাল কিংবা বিকালবেলা, যখন রোদের তেজ কম থাকে। গাছের বৃদ্ধির জন্য সারের প্রয়োজন। বাড়িতেই গাছের যত্নের জন্য সার বানিয়ে নিতে পারেন। এক গ্যালন পানিতে দুই টেবিলচামচ অ্যাপসম সল্ট মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে পারেন। মাসে একবার করে এই ব্যবস্থা করলেই চলবে। এতে বেশিদিন গাছের পাতা সবুজ থাকবে, ফুলের সংখ্যাও বাড়বে।
সার তৈরির জন্য চা-পাতার উচ্ছিষ্টাংশ, ডিমের খোসা একসঙ্গে অনেকটা জমিয়ে রাখুন। বেশ খানিকটা জমলে ডিমের খোসা গুঁড়ো করে চা-পাতার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলুন। এক-দু-সপ্তাহ এই মিশ্রণ রোদে রাখুন। গোলাপ ও অন্যান্য ফুলে সার হিসেবে খুব ভালো কাজ করবে। গাছের পোকামাকড়ের সমস্যা প্রায়শই লেগে থাকে। এক গ্যালন পানিতে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট ভালো করে মিশিয়ে স্প্রের বোতলে নিয়ে মাঝে মাঝে গাছের পাতায় স্প্রে করুন। অ্যাসপিরিনে রয়েছে অ্যাসিড, যা গাছের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
নির্দিষ্ট সময় অন্তর গাছের শুকনো ডাল ছেঁটে দিন। বিশেষ করে গোলাপ গাছের শুকনো ডাল, কিংবা গাছের শুকনো ফুল অবশ্যই পরিষ্কার করে ফেলবেন। ছোট গাছের পাতা ও ডাল কাটার জন্য বিশেষ ধরনের কাঁচি পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন। নতুন চারাগাছের বেড়ে ওঠার জন্য অনেক পানির প্রয়োজন। তাই একসঙ্গে পানি না দিয়ে বারবার অল্প অল্প করে দিতে পারেন। বড় গাছের গোড়ায় বেশি পরিমাণ পানি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে গাছের গোড়ায় ময়েশ্চার প্রবেশ করাটা জরুরি।
টবে লাগানো গাছে ঠিক কতটা পানি দেওয়া দরকার তা বোঝা একটু মুশকিলই। বেশি পানি দিলে চারিদিকে পানি পড়ে কাদা হয়ে যেতে পারে। গোঁড়া পচে যেতে পারে। তাই লম্বা সূচ টবের মাটিতে ঢুকিয়ে রাখুন। ভিজে মাটি সূচের গায়ে লেগে থাকলে বুঝবেন আর পানি দেওয়ার দরকার নেই।
গাছে পানির অভাব হলে গাছের পাতার সামনের দিকটা প্রথমে হলুদ হয়ে যাওয়ার পর শুকনো হয়ে ঝরে পড়ে যায়। তখন গাছের টবের অংশটি পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। এরপর ঘন ঘন কয়েকদিন গাছে পানি দিন। কোথাও বেড়াতে গেলে যাওয়ার দিন টবের গাছে পানি দিন। তারপর বড় পলিথিন ব্যাগের মধ্যে গাছ রেখে গোড়ার কাছে হালকা করে বেঁধে দিন। সরাসরি রোদ আসবে এমন স্থানে গাছ রেখে যাবেন না। পথিলিন ব্যাগে গাছের গোড়ায় ময়েশ্চার বজায় থাকবে।
গরমে গাছের ফুল ও পাতা বিবর্ণ হয়ে পড়লে ঠাণ্ডা ও আলো কম পৌঁছায় এমন জায়গায় গাছটি রাখুন। কারণ, অতিরিক্ত তাপ ও আলোর সংস্পর্শে গাছের পাতা বা ফুলের রং হালকা হয়ে যায়। যে ধরনের গাছের গোড়া পানিতে তৈরি হয়, যেমন ভায়োলেট ফুলের গাছ, সেগুলো কাচের জারে পানির মধ্যে রাখুন। গাছের মূল ক্রমশ বেড়ে উঠলে পানি ফেলে দিয়ে ধীরে ধীরে মাটি ভরতি করে নিন।
গাছের চারা কেনার পরে অনেক দূরে নিয়ে যেতে হলে শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। সেক্ষেত্রে গাছের চারার গোড়ার কাছে ভিজে চা পাতা দিন। তারপর অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন। বেশিক্ষণ তাজা থাকবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম