কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম: চইঝাল বা চুইঝাল লতা এক অমূল্যসম্পদ লতাজাতীয় গাছ । প্রাকৃতিকভাবে এটি ভেষজগুণ সম্পন্ন গাছ। অনেকেই কাজে লাগাচ্ছেন কৌশলের মাধ্যমে। চইঝাল গ্রীষ্মঅঞ্চলের লতাজাতীয় ফসল। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে খুব ভালোভাবে জন্মে। বিশেষ করে ভারত, নেপাল, ভুটান, বার্মা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড চই চাষের জন্য উপযোগী। আমাদের কিছু আগ্রহী চাষি বিশেস কের দক্ষিণাঞ্চলে নিজেদের কারিশমা দিয়ে এটিকে এখন প্রাত্যাহিকতার আবশ্যকীয় উপকরণের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। অন্য গাছের সাথে আশ্রয় নিয়ে এরা বেড়ে উঠে। মোটামুটি সব গাছের সাথেই বাড়ে। এর মধ্যে আম, মেহগিনি, সুপারি, শিমুল গাছে ভালো হয়। তবে আমে গাছে বেড়ে ওঠা চই সবচেয়ে বেশি ভালোমানের হয়।
চইঝাল গাছ হয়তো অনেকে চিনেন না তাদের জানার জন্য বলা যায় চইয়ের বোটানিক্যাল নাম পেপার চাবা, পরিবার পিপারেসি, জেনাস পিপার এবং স্পেসিস হলো চাবা। চইতে সুগন্ধি তেল থাকে ০.৭ শতাংশ। তাছাড়া ৪ থেকে ৫ শতাংশ পোপিরন থাকে। এছাড়া এ্যালকালয়েড, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এসব থাকে পরিমাণ মতো। লতা সুযোগ পেলে ৪০ থেকে ৫০ফুট পর্যন্ত বাড়ে। পাতা ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। হার্টের মতো আকার। অনেকেই চইপাতা গোলমরিচ পাতার সাথে বা পান পাতার সাথে মিলিয়ে ফেলেন। কেননা দেখতে তাদেরই মতো। পুরুষ স্ত্রীফুল আলাদা লতায় জন্মে। পরাগায়ন প্রাকৃতিকভাবেই সম্পন্ন হয়। ফল লাল লম্বাটে দূর থেকে দেখতে অনেকটা মরিচের মতো। ফলের ব্যাস ১ইঞ্চির মতো। বর্ষায় ফুল আসে, শীতের শুরুতে ফল আসে। বীজ ও লতার কাটিং দিয়ে বংশবিস্তার করা যায়। তবে লতার কাটিংএ বাড়বাড়তি তাড়াতাড়ি হয় এবং ফলন দ্রুত পাওয়া যায়।
আরোহী গাছের গোড়ায় সামান্য গোবর মাটি মিশিয়ে লতার ১টি গীট রোপণ করলে ক’দিন পরেই বাড়তে শুরু করে। ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই লতা কাটা যায়। সাধারণ যতেœই চই বেড়ে ওঠে। খুব বেশি যতœআত্তির প্রয়োজন হয় না। সঠিকভাবে আবাদ করলে বাণ্যিজ্যিক সম্ভাবনাকে আরো বেগবান করা যাবে। লতার পর্বমধ্য ছোটছোট করে কেটে টুকরো করে তরকারি, ডালসহ অন্যান্য ঝালযুক্ত উপকরণ হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। চইঝাল ব্যবহার করলে তরকারিতে মরিচ ব্যবহার করতে হয় না। মরিচের বিকল্প হিসেবে চইকে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। ব্যবহারকারীরা বলেন এটি তরকারিতে ব্যবহার করলে তরকারির স্বাদ বেড়ে যায়। কাঁচা অবস্থায় চিবিয়েও চই খাওয়া যায়। চইয়ের লতাকে শুকিয়ে গুড়া করেও দীর্ঘদিন রাখা যায় এবং প্রয়োজনীয় বা সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহার করা যায়। চইলতার শিকড়, কা-, পাতা, ফুল ফল সব অংশই ভেষজগুণ সম্পন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পুরো গাছ উপকারি। অতিসাধারণভাবে বলতে গেলে খরচ বিহীন এদের চাষ করা যায় এবং লাভ পাওয়া যায়।
চই গাাছর ভেষজগুণ অসামান্য এবং বিস্তৃত। পেটের পীড়া সারানো, ক্ষুদামন্দা, রুচিবাড়ানো, পেটের গ্যাস নিবারণ, শ্বসকষ্ট, কফ, কাশি, ডাইরিয়া কমানো, ঘুমবাড়ানো, শারীরীক দুর্বলতা কমাতে, গায়েরব্যাথা ম্যাজম্যাজভাব কমাতে, বাচ্চাপ্রসবের পর শরীরের ব্যাথা কমানোর জন্য অব্যর্থ মহাওষুধ হিসেবে চইঝাল কাজ করে। একটি পরিবারের সারা বছরের চইয়ের চাহিদা মেটাতে বড় একটি আরোহী আমগাছের ফলনই যথেষ্ট। প্রতিদিনই চইঝাল লতা কাটা যায়।
নার্সারি শিল্পে চইঝাল একটি মূল্যবান উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পাহাড়ি বা নির্গম এলাকায় চই প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশাল খুলনা ফরিদপুর অঞ্চলে চইয়ের আবাদ এবং বাজার আছে। শুকনো এবং কাঁচা উভয় অবস্থায় চই বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি কাচা চইঝাল লতা ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর শুকনো চইয়ের দাম আরো বেশি ২ গুণ ৩ গুণ। একজন সাধারণ কৃষক নিজের ২/৪টি গাছে চইয়ের চাষ করে নিজের পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পারেন অধিকন্তু অতিরিক্ত ফলন বিক্রি করে পারিবারিক অন্যান্য আবশ্যকীয় চাহিদা মিটাতে পারেন অনায়াসে। মরিচের বিকল্প হিসেবে চইকেযুক্ত করতে পারলে দেশের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সাথে ভেষজগুণ থাকার কারণে অনেক রোগব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম