কৃষিবিদ কে জে এম আব্দুল আউয়াল: সব জাতের পেয়ারার বয়স্ক গাছে বছরে অন্তত দুই মৌসুমে ফল দেয়। একবার শীতের পর বসন্তে ফুল আসে আর একবার বর্ষা শেষে শরৎকালে ফুল আসে। বসন্তের ফুলে শ্রাবন-ভাদ্র মাসে ফল পরিপক্ক হয় এবং শরৎ এর ফুলে মাঘ-ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ফল পরিপক্ক হয়। আমাদের দেশে জ্যাম, জেলি বা জুস তৈরীর শিল্প কারখানা তেমন ভাবে গড়ে না উঠায় আপেলের মত কচকচে পেয়ারার চাহিদা বাজারে বেশী, তাই যে সমস্ত পেয়ারা পরিপক্ক হলেও কচকচে থাকে, বীজ অপেক্ষাকৃত নরম ও কম এবং নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে ফলন দেয় সেই জাত নির্বাচন করতে হবে। উল্লেখিত গুনের ফল পেতে নির্ভেজাল থাই পেয়ারা চাষ করা উচিৎ হবে।
থাই পেয়ারা এনএসবি অনুমোদিত জাত নয়, তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক অবমুক্তায়িত বারি পেয়ারা-২ গুণে মানে উত্তম এবং অমৌসুমে ফলনশীল। থাই পেয়ারা বাউপেয়ারা নামেও পাওয়া যায়, তবে বানিজ্যিক চাষের চারা পাওয়া যাবে না। নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার থাই পেয়ারার আঁতুর ঘর এবং এস এম কামরূজ্জামান, প্রকল্প পরিচালক, সমন্বিত মান সম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্প ২য়-পর্যায় এই পেয়ারা সর্ব প্রথম থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে এনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন ও চাষীদের দিয়ে বানিজ্যিকভাবে চাষ করান। বর্তমানে সমন্বিত মান সম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্প ২য়-পর্যায় প্রকল্পের আওতায় নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার প্রগিতিশীল পেয়ারা চাষীদের সহযোগিতায় গোলাকৃতি ও চেপ্টা গোলাকৃতি (থাই-৫) জাতের আন্তর্জাতিক মানের থাই পেয়ারা চাষের সম্প্রসারণ করছে। অভিঙ্গতা কম বা না থাকলে থাই প্রাথমিক বা থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ দিয়ে শুরু করা ভাল।
চারা নির্বাচন (Seedling Selection): বীজ থেকে চারা উৎপাদন করলে কমপক্ষে ৫৮% মাতৃ গুণের গাছ পাওয়া যায়, কেননা পেয়ারা ফুলে পরপরাগায়ন খুব বেশী হয় না। গুটি কলম বা ক্লেপ্ট কলমের গাছ তৈরী করলে ১০০% মাতৃগুণ ঠিক থাকে, ফল তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় তবে গুটি কলমের বাগান স্থায়িত্বে ও ফলনে কম হয়। পেয়ারা গাছকে ডাইব্যাক ও উইল্টিং রোগ থেকে বাঁচিয়ে বাগানকে দীর্ঘ মেয়াদী রক্ষা করতে রোগ সহনশীল পেয়ারা গাছের চারাকে আদিজোড় হিসাবে ব্যবহার করে তার উপর কাংক্ষিত জাত গ্রাফটিং করে নিতে হবে।
আদিজোড়ের জন্য পলিপেয়ারা বা দেশী বন্য প্রজাতির পুরনো গাছের বীজের চারা ব্যবহার করা যেতে পারে তবে খেয়াল রাখতে হবে আদিজোড় যেন ফলনশীল থাই পেয়ারা জাতকে ঠিকমত খাদ্য পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। আদিজোড়ের জন্য নাটোরের বাংলাপেয়ারা ভাল। গ্রাফটিং করা চারা শুরুতে বাড়-বাড়তি ঝোপালো ধরনের হয়, শুরু থেকেই ফুল আসে ফলও ধরে তবে বানিজ্যিক ফলন পেতে গাছের দৈহিক সামর্থ্য তৈরীতে এক বছর সময় প্রয়োজন হয়। গ্রাফটিং করা গাছের পেয়ারা আকার-আকৃতি কাংখিত মানের পাওয়া যাবে ও বাগান দীর্ঘস্থায়ী হবে।
থাইপেয়ারা চাষে দেশী বা পলিপেয়ারা আদিজোড় হিসাবে ব্যবহার করলে উচ্চফলনের জন্য যথাপরিমান খাদ্য সরবরাহ নিতে পারে না। বীজ থেকে উৎপাদিত চারার বাড়বাড়ন্ত বেশী এবং গাছের কাঠামো শক্ত ও সুন্দর হয়। বীজ থেকে চারা, কাটিং অথবা গ্রাফটিং যা ই হোক না কেন, পলি ব্যাগ/মাটির টবে রেখে তৈরী করতে হবে এবং যথাসম্ভব অল্প বয়সে জমিতে রোপন করতে হবে।
রোপনকৃত বাগানের বাড়ন্ত পেয়ারা চারার পাতা-কান্ড সনাক্তপূর্বক হুবহু মাতৃগুণের পেয়ারা গাছ পাওয়া অনেকটাই সম্ভব, তাই অভিজ্ঞতা থাকলে বাগানে রোপিত চারার আকার-আকৃতি, বাড়-বাড়ন্ত ও পাতা/কান্ড সনাক্তপূর্বক শৈশবেই অজাত গাছ বাছাই করে চারা পূনঃস্থাপন করা যায় অথবা গ্রাফটিং করে পারবর্তন করতে হবে। তবে প্রথম বাগানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজ বাগানের বাছাইকৃত মাতৃগাছ থেকে চারা/কাটিং/কলম উৎপাদন পূর্বক নতুন জমিতে দ্বিতীয়বার বাগান করাই শ্রেয়।
বি:দ্র: ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে অনেক সময় পুরানো পেয়ারা বাগানের ফাঁকা স্থান চারা/কলম তৈরীর জন্য ব্যবহার করা হয় যা একেবারেই অনুচিৎ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম