কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সবুজ পাহাড়ে ছনের চালার ঘর এখন আর তেমনটা চোখেই পড়ে না। ঢেউটিনের ব্যাপক ব্যবহারের মুখে চাহিদা কমে যাওয়ায় পাহাড়ে আর আগের মতো ছন চাষ করছেন না চাষিরা। ফলে দ্রুত ছনের চালার স্থান দখলে নিয়েছে কমদামি টিনের চালা। এমন চিত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতেই। তবে কি পাহাড়ে সচ্ছলতা বিরাজ করতে শুরু করেছে? না! সচ্ছল-অসচ্ছলতার প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে টিনের টেকসইয়ের বিষয়টি।
ছন চাষাবাদে তেমন পরিশ্রম নেই। শুধুমাত্র পাহাড়ের যে অংশে ছন চাষ করা হবে তা পরিষ্কার করে দিলেই কিছুদিন পর প্রাকৃতিকভাবেই ছনের কুঁিড় জন্ম নেয়। দেড় দুই হাত দৈর্ঘ্য হলে আগাছা পরিষ্কার করে একবার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। আর ৬ থেকে ৭ ফুট লম্বা হলেই কাটার উপযুক্ত হয়। আহরণের পর পর্যাপ্ত রোদে ১৫ থেকে ২৫ দিন শুকিয়ে নিতে হয়। এরপরই তা ব্যবহার উপযোগী হয়। অন্যদিকে বাগানে বড় কোন গাছ থাকলে তার ছায়া ও পাতা পড়ে ছনের বৃদ্ধিতে যেমনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তেমনি ছনে পঁচন ধরে নষ্ট হয়। ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়।
বর্ষা মৌসুম অনেক দূরে থাকায় আশ্বিন মাসে ছন আহরণ করা হলেও বাজারে এর চাহিদা তেমন থাকে না। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই এসময় ছন ব্যবহারকারিরা তাদের পুরনো ঘরের চালা মেরামতে উদ্যোগ নেওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। মন্দাভাবের কথা জানিয়ে ছন বিক্রেতারা জানান, নিজের বাগানে চাষাবাদ করলে দিনে একজন শ্রমিক ছয় বোঝা ছন কাটতে পারে। কিন্তু কাঁচা অবস্থায় তা দূর থেকে বহন করে আনা সম্ভব হয় না। আবার শুকোতেও সময় লাগে ১৫ থেকে ২৫ দিন। নিজের বাগান না থাকলে বিভিন্ন উন্মুক্ত পাহাড় থেকে খুঁজে খুঁজে ছন আহরণ করতে হয়।
চাহিদা না থাকায় দামও পাওয়া যায় না ভালো। ফলে এ কাজে শ্রম না দিয়ে বরং অন্য কাজে দিলে দৈনিক ৩০০ টাকা আয় করা যায়। তাই এই পেশার ওপর নির্ভর করা যায় না। ফলে পেশা পরিবর্তন করা ছাড়া উপায় থাকছে না। কথা হয় ছন ক্রেতা শাহজাহান (৪০)-এর সঙ্গে। তিন ভার ছন কিনেছেন তিনি। জানালেন ছন মাত্র এক বছর ব্যবহার করা যায়। তবে এবারও অর্থের সংকুলান না হওয়ায় ঘরের চালায় টিন লাগাতে পারেননি।
পাহাড়ে ছনের উৎপাদন ও ব্যবহার কমে যাওয়ায় এটি এখন বিলুপ্তির পথে। মূলত প্রতিবছর ছন ক্রয় ও চালা মেরামতের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে সবাই কমদামি ঢেউটিন ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবার নেহায়েত অস্বচ্ছল মানুষেরা সামর্থ্য না থাকায় ছনের ওপরই ভরসা রাখছেন মাথা গোঁজার জন্য। রাঙ্গামাটি কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক হারুনুর রশিদের মতে, নানাবিধ ব্যবহার বাড়ানো গেলে হয়তো ছন রক্ষা করা সম্ভব হতো। নইলে এক সময় হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত মাথা গোঁজার ঠাঁই এই ছন হারিয়ে যাবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম