এস এম মুকুল: কৃষি ক্ষেত্রে পরামর্শ ও তথ্য সহায়তার জন্য কৃষকরা এখন প্রযুক্তির ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ই-কৃষি খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার জানালা। কৃষি তথ্য সার্ভিস দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ২৪৫টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি) স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি তথ্যকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনলাইনে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের ১৬১২৩ নাম্বারে যে কোনো মোবাইল থেকে ফোন করে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট অফলাইন/অনলাইনে সার সুপারিশ নির্দেশিকা প্রদান করছে। আখচাষিরা মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ই-পুঁজিসেবা গ্রহণ করছেন। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ইফরি) গবেষণায় দেখা গেছে_ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের প্রায় ১৩ শতাংশ কৃষক দাম যাচাইয়ে সেলফোন ব্যবহার করেছেন।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি। লাঙল-জোয়াল আর ‘হালের বলদ’-এর স্থলে এখন ‘কলের লাঙল’ ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার এনেছে নতুন গতি। বারি ও ব্রির হিসাব মতে, দেশের মোট আবাদি জমির ৯০ ভাগ চাষ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। জমি চাষ, নিড়ানি, সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও ধান থেকে চাল সবই হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, ঝাড়ার যন্ত্র ইউনার, নিড়ানির যন্ত্র ইউডার, ধান ও গম মাড়াই কল, ভুট্টা মাড়াই কল ইত্যাদি যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে।
আশার কথা হলো_ কৃষক, কৃষিবিদ, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সরকারের বাস্তব পদক্ষেপের ফলে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটেছে। বাংলাদেশের কৃষিতে উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মাননাপত্র প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে আমাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আছে, তার মধ্যে কৃষিতে অর্জন বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বে কৃষি ক্ষেত্রে মডেল দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এটাই আমাদের আশান্বিত করে।
লেখক : কৃষি ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক