কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নাইট কুইন – নামেই বোঝা যায় রাতের আঁধার আলো করে ফোটে ফুলটি! রাতের সাথে রয়েছে নাইট কুইন ফুলের বিশেষ সম্পর্ক। সন্ধ্যা থেকেই একটু একটু করে ফোটার প্রস্তুতি নিতে নিতে গভীর রাতে তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় ফুলটি এবং রাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে ভোরের আলোয় মিলিয়ে যায় এর সৌন্দর্য। ‘এক রাতের রানী’ নাইট কুইন ফুলকে বলা হয় সৌভাগ্যের প্রতীক। বলা হয়, যাঁর বাড়িতে এ ফুল ফোটে তাঁর বাড়িতে সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে ফুলটি! এর কারণ হতে পারে এই যে, নাইট কুইন ফুল বহু সাধনার ফসল হয়!
এ ফুলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর! দুর্লভ এ ফুলটি কার বাড়ির গাছে কখন ফুটবে তা বলতে পারে না কেউই! এ কারণে কারো বাড়িতে নাইট কুইনের কলি দেখা গেলেই প্রতিদিন বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা! নাইট কুইন ফোটার এই দুর্লভ ক্ষণটি হেলায় হারাতে চায় না কেউই! সন্ধ্যা থেকে ভোর, কেবল এতটুকুই আয়ু এই ফুলের। নাইট কুইন মূলত বর্ষাকালীন ফুল। গ্রীষ্মের শেষে বা বর্ষার শুরুতে এই ফুল ফোটে। তবে এই ফুল মাঝে মাঝে বছরের যেকোনো সময় ফুটতে দেখা যায়। প্রথমে গাছে একটি-দুটি করে ফুল আসলেও প্রতি বছরে ফুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
একটি গাছে একসাথে ৫০-৬০টি পর্যন্ত ফুল ফুটতে পারে। দারুণ সুগন্ধী ফুল নাইট কুইন মূলত সাদা হয়। তবে মাঝে মাঝে বেগুনী বা মেরুন পাপড়িযুক্ত নাইট কুইনের দেখা মেলে। অভিজাত সৌন্দর্যের প্রতীক নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Epiphyllum oxypetalum। এটি ক্যাকটাস প্রজাতির গাছ। নাইট কুইন মোটামুটি দুর্লভ প্রজাতির ফুল। আগে শুধু ইউরোপের কয়েকটি দেশে দেখা গেলেও বর্তমানে তা আমাদের দেশেও দেখতে পাওয়া যায়। নাইট কুইনের প্রথম দেখা মেলে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায়, ১৯৫৩ সালের দিকে। মরুভূমির উদ্ভিদ হলেও বর্তমানে তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
নাইট কুইনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পাথরকুচির মতো এটিও পাতা থেকে অংকুরিত হয় এবং বংশবিস্তার করে। পাতা থেকে ফুলও জন্মে! এক রাতের ফুল নাইট কুইন টবে চাষ করা যায় বলে অনেকের শখের বাগানেই তা স্থান পায়। তবে এই গাছের যত্নআত্তি করতে হয় খুব! নাইট কুইন ফুল ফোটানো বেশ শ্রমসাধ্য ব্যাপার বলেই তা সকলের কাছেই আরাধ্য। নাইট কুইন ফুলকে জড়িয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পটির পটভূমি হলো দুহাজার বছর আগে, বেথেলহাম নগরীতে। তখন নগরীর প্রত্যেকটি বাড়িতে নাইট কুইন গাছ ছিল।
এক রাতে প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি গাছ আলো করে ফুটে উঠল নাইট কুইন। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল পুরো শহর। এ ঘটনায় নগরবাসী খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠল যে, প্রকৃতি তাদের সাথে কোন খেলায় মেতে উঠল! পরে সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পারল। সেই রাতে বেথেলহামের একটি ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল এক মহাপুরুষের। তিনি যিশুখ্রীষ্ট। সে রাতে বেথেলহামের সব নাইট কুইন আনন্দে মেতে উঠেছিল যিশুখ্রীষ্টের আগমন উপলক্ষে। এ কারণেই নাইট কুইন ফুলটি ‘বেথেলহাম ফ্লাওয়ার’ নামেও পরিচিত। মূলত এ কারণেই ফুলটিকে সৌভাগ্য ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
সুত্রঃ যায়যায় দিন / কৃপ্র/এম ইসলাম