কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শেরপুরে মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার রামেরকান্দি এলাকার গৃহবধূ আইরিন মিলি হাফসা। এতে এলাকার অনেকেই এখন মাশরুম চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। জানা যায়, ২০১০ সালে ভূরদী গ্রামে কৃষক পরিবারে তার বিয়ে হয় হাফসার। স্বামীসহ তাদের দু’জনেরই প্রবল ইচ্ছা কোন বিষয়ে সফল হওয়া। ২০১৫ সালে মাশরুম উপকেন্দ্র ময়মনসিংহ হর্টিকালচার স্থানীয় বানেশ্বরদী ইউনিয়নে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। তা দেখে হাফসার স্বামী ঠিক করেন মাশরুম চাষ করে তারা সফল হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবেন।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরাধীন সাভারের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রের কর্মসূচির সহযোগিতায় জাতীয় মহিলা সংস্থার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প-৩য় পর্যায়ের বাস্তবায়নে নকলা পৌরসভায় চালু হয় মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ। সেখানের এক প্রশিক্ষণার্থী মাকসুদার কাছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রকাশিত ও নব্য স্বাক্ষর ও সীমিত স্বাক্ষরদের জন্য অব্যাহত শিক্ষা উপকরণের অংশ হিসেবে মুদ্রিত ‘মাশরুম’ নামের বই ফটোকপি করে নেয় তারা। বই থেকে অর্জিত জ্ঞান এবং মাকসুদার নিকট হাতে কলমে পরামর্শ নিয়ে তারা সাভারের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র থেকে আগস্ট মাসে ৬০টি মাশরুমের স্পন এনে পরীক্ষামূলকভাবে চাষের যাত্রা শুরু করেন।
সকাল বিকেল নামমাত্র সেবার মাধ্যমে প্রতিটি স্পন হতে মাশরুম সরবরাহ করে শহর জুড়ে সাড়া ফেলেছেন। অসীম সম্ভাবনাময় এ ফসলে তারা সফলতার মুখ দেখাতে অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বইয়ের সহযোগিতা নিয়েই। শুরুতে ১টি লোহা ও ৪টি প্লাস্টিকের সেলফে রাখা ৬০টি স্পনসহ তাদের খরচ হয় মাত্র ৪ হাজার টাকা। প্রথম মাসেই খরচ বাদে ৩ হাজার টাকা লাভ হয় তাদের।
হাফসা বলেন, লাভ-লোকসান হিসেবে আমরা সন্তুষ্ট নই, অপ্রচলিত কোন বিষয়ে সফল হতে চেয়েছিলাম, আমরা হতে পেরেছি- এটাই আমাদের মূখ্য বিষয় ছিল। তাদের দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন, কেউ কেউ তাদের কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বই হতে আহরিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে তারা জানান, একটি আধা কেজি ওজনের স্পনের দাম ২০ টাকা। স্পনের দাম ছাড়া আর কোন খরচ নেই। প্রতিটি স্পন হতে ৩/৪ বারে ২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়, কাঁচা অবস্থায় যার বাজার মূল্য ১৫০ টাকা। সুতরাং প্রতিটি স্পন হতে ১৩০ টাকা লাভ হওয়ায় ৬০ টি স্পন হতে একমাসে লাভ হয় ৭ হাজার ৮শ’ টাকা। যদিও সব তারা নিজেরাই খেয়ে ফেলেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বইয়ের তথ্য মতে, সবজি হিসেবে মাশরুম খুব পুষ্টিকর। তবে অন্য সবজি মাটিতে জন্মালেও মাশরুম মাটিতে জন্মায়না। এটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি হওয়ায় একে সবজি মাংস বলা হয়। মাশরুম শুকিয়েও খাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে ২৫ গ্রাম প্রোটিনসহ ভিটামিন বি, সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, খনিজ পদার্থ, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ও এনজাইম ছাড়াও ইরিটাডেনিন, ল্যাম্পট্রল নামক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানো, ক্যান্সার প্রতিরোধ, রক্তশূণ্যতা ও পেটের পীড়া কমানো, হাড় ও দাঁতের গঠনসহ টিউমার বড় হওয়া রোধ করে। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্ট্র মাশরুম, বর্ষাকালে ইয়ার মাশরুম এবং বারমাসি ওয়েস্টার মাশরুম – এই তিন জাতের মাশরুম এদেশে বেশি চাষ করা হয়। গড়ে ২০ ডিগ্রী থেকে ২৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় স্পন রাখলে ১২ থেকে ১৫ দিনেই ফলন পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্বে অনেক রকম মাশরুম চাষ করা হলেও বাংলাদেশে ৮ থেকে ১০ জাতের মাশরুম চাষ করা সম্ভব। এদেশের আবহাওয়া ও আপেক্ষিক আদ্রতা মাশরুম চাষে বেশ উপযোগী। এ ধরনের পরিবেশে ঝিনুক, দুধ, কান, বোতামতাপ, সহনশীল বোতাম ও খড় মাশরুম বেশি জন্মে। নকলায় চলমান জাতীয় মহিলা সংস্থার মাশরুম চাষের প্রশিক্ষক এনামূল হক বলেন, মাশরুম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক প্রকাশিত ও নব্য স্বাক্ষর ও সীমিত স্বাক্ষরদের জন্য অব্যাহত শিক্ষা উপকরণের অংশ হিসেবে মুদ্রিত ‘মাশরুম’ নামের বই, সাভারের মাশরুম সেন্টার, দেশের ১৭টি হর্টিকালচার সেন্টারের মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র বা কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সকল তথ্য জানা যেতে পারে। তার মতে, যে কেউ চাইলে অল্প পুঁজিতে নামমাত্র শ্রমে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম