মো. আব্দুর রহমান: ষাটের দশকে আমাদের দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে একচেটিয়াভাবে সরিষার তেল ব্যবহৃত হতো। তখন জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি এবং ভোজ্যতেলের চাহিদা ছিল ৬.৭২ লাখ মেট্রিক টন। লোকসংখ্যা অনুপাতে কৃষি জমি ছিল বেশি এবং তেমন কোনো ভোজ্যতেল আমদানি হতো না। মানুষ নিজেরাই সরিষা, তিল, চিনাবাদাম প্রভৃতি তেলশস্য চাষ করে কুলুর ঘানিতে ভাঙিয়ে ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রি করত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তেলের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যমুখী ফুলের তেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, অ্যাজমা, কোলন ক্যানসারসহ অন্যান্য কানসারের ঝুঁকি কমায়, চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে, শরীর পুনর্গঠনে সহায়তা করে, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক সুন্দর থাকে এবং চুলপড়া রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে সূর্যমুখী তেল। সূর্যমুখী ফুল পাখি ও কীটতঙ্গকে আকর্ষণ করে। এসব পাখি ও কীটপতঙ্গ জমির আশপাশের ফসলের পরাগায়নে সাহায্য করে থাকে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জার্মপ্লাজমের প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. আব্দুর রহিম জানালেন ভোজ্যতেল হিসাবে সূর্যমুখীর নানান গুণের কথা। সূর্যমুখী তেলে সরিষা ও সয়াবিন তেলের চেয়ে মানবদেহের জন্য উপকারী তিনটি দরকারী উদ্ভিজ্জ ফ্যাটি এসিড যথা লিনলিক এসিড, লিনলেনিক এসিড ও এ্যারাকিডোনিক এসিড বেশি পরিমাণে থাকে। অন্যদিকে, এতে সরিষার তেলে বিদ্যমান ক্ষতিকারক গ্লুকোসিনোলিক এসিড ও ইউরোসিক এসিড থাকে না।
আবার স্থানীয়ভাবে সূর্যমুখী ভাঙানো হয় বলে এতে বাজারের তেলের মত কোনো সংরক্ষণকারী উপাদান বা প্রিজারভেটিভ থাকে না। ফলে সব দিক বিবেচনা করে আমরা বলতে পারি স্বাস্থের জন্য সূর্যমুখীর তেল অনেক অনেক ভাল। অর্থাৎ সংরক্ষক উপাদানহীন এ তেলকে তিনি শরীরের জন্য বেশি উপকারী বলে মনে করছেন।
একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. রহিম আরো বলেন, উদ্ভিদজাত তেলের মধ্যে সূর্যমুখীর তেলে LDL (Low Density Lipoprotien) কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুবই কম মাত্রায় থাকে। এ তেল কাষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বাতজাতীয় সব অসুখ দূর করার জন্য সূর্যমুখী তেল উপকারী। শিশুদের শরীরে সরিষার তেলের পরিবর্তে বর্তমানে সূর্যমুখী তেল দেওয়া হয়। সূর্যের রোদে সূর্যমুখীর তেল সংশ্লেষিত হয়ে ত্বকের জন্য উপকারী ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করে। ফলে ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত দূর করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তিনি বলেন, অন্য যে কোনো তেলের চেয়ে এ তেল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এ তেল ব্যহারের ফলে শরীর ভালো থাকে। সূর্যমুখী ফুলের তেল শারীরিক সৌন্দর্য্যবর্ধক। বিভিন্ন প্রসাধনীতেও এ তেল ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে সূর্যমুখীর উৎপাদন কম হওয়ায় এ তেল কম পাওয়া যায়। ভোজ্যতেল হিসেবে অন্য তেলের চেয়ে শরীরের জন্য এ তেল অনেক বেশি উপকারী। বাজারে সূর্যমুখীর তেলের সরবরাহ কম থাকায় মানুষ অন্যান তেল বেশি ব্যবহার করছে। বাজারে সরবরাহ থাকলে এ তেলও সচেতন মানুষ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করত।
সূর্যমুখী চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, সূর্যমুখী বছরের সব সময়ই দুই মৌসুম গ্রীষ্ম ও শীতে চাষ করা যায়। আগে যেসব জমিতে ধান চাষ করার পর পতিত থাকত, এখন সেখানে সূর্যমুখীর চাষ করা হচ্ছে। সূর্যমুখীর অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষকদের বর্তমানে এর বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। বীজের গুণগত মান রক্ষার জন্য তিনি একে শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন। সেই সাথে দেশে সূর্যমুখী বীজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের বিশ্ববাজারে দেশে উৎপন্ন বীজের বাজার তৈরি করা, পাশাপাশি কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই বৈজ্ঞানিক।
কৃপ্র/এম ইসলাম