‘১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বিদায় নিয়েছে।দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার দিন শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, সহস াব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের পর এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও কাজ করছে সরকার। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সচেতন নাগরিক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল সোমবার বিকালে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলা এবং ৪৯০ উপজেলায় একযোগে উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ উন্নয়ন মেলা চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত। এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশের চলমান উন্নয়ন সাফল্যকে জনগণের সামনে তুলে ধরে তাদের সরকারের উন্নয়নকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি যুক্ত ছিল টাঙ্গাইল, বরিশাল, খুলনা ও গোপালগঞ্জ জেলা। মেলার কার্যক্রম উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এসব জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের মহাপরিচালক আব্দুল হালিম অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মেলা সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশকে এগিয়ে নিতে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই। দেশের উন্নয়ন যেন স্থায়ী হয় এবং এর সুফল যেন দেশের মানুষ পায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমরা জেলা-উপজেলা ছাড়াও বিদেশে দূতাবাসগুলোতে এই মেলার আয়োজন করছি। যেন বিদেশিরাও জানতে পারে আমরা উন্নয়নের জন্য কী কী কাজ করছি। আমি আশা করি এই মেলাটা যেন সফল হয়। কারণ বাংলাদেশকে আমরা খুব দ্রুত দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবো। কোন অঞ্চলে কী উত্পাদন হয় তার ভিত্তিতে কিভাবে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে ভাবছি আমর?া। আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেন আরো বিনিয়োগ আসে- সে পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকার প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নেও কাজ করছে। আমরা ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনা থেকে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের একদিনের বেতন অনুদান হিসেবে দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করে খুলনাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং এটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমি মনে করি সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাহী কর্মকর্তা যদি এভাবে উদ্যোগ নেন তাহলে প্রতিটি জেলা-উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত হতে পারে এবং প্রতিটি মানুষ একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী খুলনায় পুনর্বাসিক ভিক্ষুক আম্বিয়া বেগমের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। আম্বিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি সেলাই মেশিন এবং নগদ কিছু অর্থ সাহায্য পাওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তি পরিত্যাগ করে নিজে আয় করে চলছেন শুনে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।
প্রসঙ্গত, উন্নয়ন মেলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, সংস্থা, ব্যাংক ও বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অংশগ্রহণ করছে। মেলায় প্রতিদিন সভা-সেমিনার ছাড়াও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ছবি ও পোস্টার প্রদর্শনী এবং দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম