কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমে যাচ্ছে আবাদী জমির পরিমাণ। বর্তমানে দেশের প্রায় ১ শতাংশ ভূমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেবল তিস্তা ব্যারেজ থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ১.৮ লাখ হেক্টর জমি পরিত্যক্ত। প্রায় ৭শর মতো নদী বছরের অর্ধেক সময় জুড়ে শুষ্ক থাকে। এ প্রেক্ষিতে নদী তীরবর্তী বা বালুচরে নতুন ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কাজে লাগানোর মাধ্যমে সবজি চাষ করে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা জরুরি।
সম্প্রতি প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে উপস্থাপিত প্রবন্ধে এ তথ্য উঠে আসে। প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার মেশানোর কারণে জমির দীর্ঘ মেয়াদি উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে। এজন্য প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনায় জৈব সার, দক্ষ সেচ ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, আবাদী জমি যেভাবে কমে যাচ্ছে তাতে খাদ্য নিরাপত্তা মোকাবেলায় নতুন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন অপরিহার্য। সে সঙ্গে দেশের অব্যবহৃত জমি বা বিস্তৃণ চরসমূহকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে দিকে সরকার মনোযোগ দিচ্ছে। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অব্যবহৃত জমি ও দেশের বিস্তৃর্ণ ‘জেগে উঠা চরকে’ উৎপাদনের কাজে লাগানোর পাশাপাশি কৃষকরা যাতে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান। তারা বলেন, নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় টেকসই পদ্ধতির উদ্ভাবন ও প্রয়োগকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে উপস্থাপিত এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ফসলের উপযুক্ত জাত উদ্ভাবন ও বাছাইয়ের দিকে। এর পাশাপাশি জলবায়ুসহিষ্ণু এসব নতুন জাত কৃষকের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান তা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে খাল ও পুকুর খননের মাধ্যমে সেচের পানি প্রাপ্তি এবং সুষ্ঠু সেচ ব্যবস্থাপনার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কৃষিখাতকে সম্ভাব্য যেসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে তা ব্যাখ্যা করে বিশিষ্ট পানিসম্পদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ুর ক্রম পরিবর্তনেরর সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমন উৎপাদনের ওপর, যার ফলে কৃষকরাই সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ধানের জাত উদ্ভাবনের দিকে মনেযোগ না দিলে কৃষকরা ধান উৎপাদন থেকে সরে এসে সবজির দিকে মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকে পড়বেন। এতে ধান উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
সুত্রঃ Policy Adda/ কৃপ্র/এম ইসলাম