কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে শুধুই সবুজের সমারোহ। যেন ফসলের চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো অঞ্চল। আলু, গম, সরিষা আর সবজি চাষে ভরে উঠেছে কৃষকের ক্ষেত। এক ফসল উঠতে না উঠতে আরেক ফসলের চাষ নিয়ে মাঠে মাঠে ব্যস্ত কৃষক। কয়েকদিন আগে কৃষকের ঘরে ঘরে উঠেছে আমন ধান। এখন সেই জমিতে ফের চাষ শুরু হয়েছে বোরোর। একটা সময় ছিল যখন এ অঞ্চলের জমিতে বছরে একবারই আবাদ হতো। এখন সেই জমিতে বারোমাস ফসল ফলাচ্ছেন কৃষক। কৃষিক্ষেত্রে সরকারের বৈপ্লবিক সাফল্যে একের পর এক ফসল উৎপাদনে কৃষকের ঘরে ঘরে ফিরেছে সুখের দিন।
এখন মৌসুম চলছে বোরো চাষের। তাই আমনের পর বোরো ধানচাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক। ঘন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে মাঠে নেমে পড়েছেন কৃষক। চলতি বছরেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও বীজতলা খুব ভাল হওয়ায় কৃষক আগাম বোরো চাষে নেমেছেন আটঘাট বেধে। এখন বীজতলা তৈরি আর আগাম রোপণ শুরু হলেও মাঘ মাসের শেষের দিকে পুরোদমে বোরো রোপণ শুরু হবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭০ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৬৭ হাজার ৪১১ হেক্টর, নওগাঁ জেলায় এক লাখ ৯৮ হাজার ৪৬২ হেক্টর, নাটোর জেলায় ৫৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৬ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে।
তবে কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বোরো আবাদ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছে গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে বোরো আবাদের লক্ষ্যানুযায়ী চলতি মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নানা কারণে গতবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও এবার আগেভাগেই কৃষকরা মাঠে নেমেছেন।
আমন মৌসুমে ধানের ভাল ফলন ও দাম পাওয়াই বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক বোরো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তবে সেচনির্ভর হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামায় ইতোমধ্যে অনেক গভীর নলকূপ পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। আগের তুলনায় পানি কম উঠছে। এতে বোরো আবাদের কৃষকদের আগ্রহ বেশি থাকলেও সেচের কারণে কাক্সিক্ষত ফসল নিয়েও ভাবছেন। রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রকাশনগর গ্রামের কৃষক মহসিন আলী জানান, বোরো ধানের চারা উৎপাদন প্রায় শেষ। রোপণের জন্য জমি তৈরি করা হচ্ছে। তিনি চলতি মৌসুমে ৩০ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করবেন। এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে বোরো রোপণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল হলে এবার ভাল ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বোরো চাষের জন্য এরইমধ্যে সব গভীর নলকূপ চালু রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বোরোর টার্গেট যাতে বিচ্যুতি না হয় এজন্য বিএমডিএ মাঠ এলাকায় গভীর নলকূপ সচল রাখার কাজ শুরু করেছে।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ/ কৃপ্র/এম ইসলাম