কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ঢাকনা বিহীন চিমনি পথে নির্গত কালো ছাইয়ে মিল এলাকার প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে এলাকার লোকজন। প্রতি মৌসুমে আখ মাড়াই শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাবাসী মিলের নির্গত এই ছাই নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ভোগেন। ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি মৌসুমে আখ মাড়াই শুরু হওয়ার পর শুরু হয় চিনিকলের ঢাকনা বিহীন চিমনি পথে মিলের ধূঁয়ার সাথে কালো ছাই নির্গত হওয়া। প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার লোকজনের বাড়িঘরের সর্বত্র ছাইয়ের স্তর জমে যায়। বাগানের বা বাড়ির ফলদ গাছের ডগায় ছাইয়ের স্তর জমে থাকায় আম, লিচুর মুকুল আসতে বিলম্ব ঘটে। এছাড়া বাড়ি, ঘরের দরজা-জানলা লাগিয়ে না রাখলে ঘরের ভিতরের সবকিছু কালো ছাই দিয়ে নোংরা হয়ে যায়।
এছাড়া চিনিকলের ছাই লোকজন ও পশুপাখির চোখে পড়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। ছাই মানুষের চোখে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। এত বড় সমস্যা জানা সত্বেও চিনিকল কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর নির্বিকার রয়েছেন। ঠাকুরগাঁও স্টেশন রোড এলাকার গৃহবধূ আসমা আক্তার জানান, কাপড় ধুয়ে রোদে দেয়া যায় না। মিলের ছাই পড়ে কালো হয়ে যায়। রান্না করা ভাত-তরকারি নষ্ট হয়ে যায়।
স্থানীয় অন্য এক গৃহবধূ জানান, যে কয়েক মাস চিনিকল চালু থাকে, ততোদিন ঘরের জানালা খুলতে পারি না। জানালা খুলে রাখলেই বিছানায় ছাই পড়ে কালো হয়ে যায়। মিল এলাকার বাসিন্দা মাজেদুর রহমান বলেন, আমার ছেলে কিছুদিন আগে স্কুল যাওয়ার পথে তার চোখে ছাই পড়ে। অনেক পানি দেয়ার পরেও ছাই বেড় না হওয়ায় পরে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যেতে হয়। আমরা এলাকাবাসী এই ছাই নিয়ে বিপদে আছি।
স্থানীয় সাদেকুল ইসলাম জানান, চিনিকলের ছাইয়ের জন্য বাইক চালানো খুব কষ্টের। কখন যে চোখে ছাই পড়ে তার ঠিক নেই। এই সমস্যা সুগারমিল যতোদিন চলবে ততদিনই থাকবে। রোড এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, মিল চালুর ৩ মাস ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে। মিলের ছাই খাওয়ার ওপর পড়লে সেই খাওয়া আর বিক্রয় করা সম্ভব হয় না। তাই সুগার মিল যে ৩ মাস চলবে সেই ৩ মাস হোটেল কেন, সব ব্যবসাই বন্ধ করতে হবে আমাদের।
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ১৮০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন এবং ৯ ফুট ব্যাসের চিমনির ঢাকনাটি বেশ কয়েক বছর আগে কর্তৃপক্ষ খুলে নেয়। এরপর থেকেই চিমনিটি খোলা অবস্থাতেই রয়েছে। কবে আবার চিমনির ঢাকনা মেরামত হবে তা কারও জানা নেই। এতো সমস্যার হওয়া সত্বেও কি কারণে কর্তৃপক্ষ ছাই ছড়ানো বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করছে না তা কারো বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের জিএম প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেন, ঠিক কবে থেকে চিমনির ঢাকনা নেই, তা আমার জানা নেই। চিনিকলের বয়লারটি পুরনো হওয়ায় অতিরিক্ত ছাই নির্গত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ/ কৃপ্র/এম ইসলাম